অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিন।

শেয়ার করুন

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকঃ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা আমাদের সকলের কাম্য। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই আধুনিক সব যন্ত্রাংশের ব্যবহার করে আসছি। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির নতুন চমক স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাব ও ল্যাপটপ ব্যাবহারকারীর সংখ্যা অত্যাধিক।

প্রত্যেক জিনিসের ভালো দিক গুলোর পাশাপাশি অনেক গুলো খারাপ দিকও রয়েছে। যেসব বিষয়ে সচেতন না হলে আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।আজকের পোস্টে আমরা আলোচণা করব কিভাবে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকানোর পরেও আপনার দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে পারবেন। তো চলুন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার উপায় গুলো কি তা জানি।

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক/ স্কিন টাইমার

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক আলোচনা করার আগে স্কিন টাইমার কি সেটা জানতে হবে। স্ক্রিন টাইম হল- একজন ব্যক্তি কত সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকছেন সেটা। সেটা হতে পারে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকা অথবা কোন স্মার্ট ডিভাইস যেমন: কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ট্যাবলেট, ভিডিও গেমস ইত্যাদি।

কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনি স্ক্রিন টাইম সমস্যায় ভুগছেন কিনা? জানতে এই কয়টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন।

  • মোবাইল দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়া এবং ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল চালানো।
  • ভাত খাওয়ার সময় কি টিভির পর্দায় বা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছেন?
  • মোবাইলের চার্জ বা বাসায় কারেন্ট না থাকলে কিরক্ত লাগে?
  • সারাদিন মোবাইল চালাতে ভালোবাসেন?

যদি এই সব গুলো প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি স্ক্রিন টাইম সমস্যায় ভুগছেন।

স্ক্রিন টাইমের কারণে যে সমস্যায় পড়বেন

আপনি বা আপনার পরিবারের কোন সদস্য যদি অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে স্ক্রিন টাইমে আসক্ত হয় তাহলে আপনি/ তিনি নিম্নের সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে পারেন।

স্থুলতার বৃদ্ধি করে

জতীয় সংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থ্যা ইউনিসেফের এক গবেষনায় বলছে। স্ক্রিন টাইমের কারণে মানুষের বাহিরে যাওয়া বা শারীরিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। যার ফলে স্থুলতা বৃদ্ধির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।

অটিজমে আক্রন্ত হওয়া

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক না জেনে যেসব শিশু অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে আসক্ত তারা দিন দিন নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধি করে ফেলে। ফলে তারা বাহিরের পরিবেশের মানুষদের সাথে সহজে মিশতে পারে না এবং তারা একাকীত্ব থাকতে পছন্দ করে। যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়।

দৃষ্টিশক্তি কমে যায়

বিশেষজ্ঞদের মতে স্ক্রিন টাইমের কারণে শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক যে কারো দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তবে বিশেষ করে শিশু কিংবা কম বয়সীরা এই সমস্যায় বেশি ভুগেন। দীর্ঘক্ষণ টিভি কিংবা মোবাইল স্ক্রিন অথবা গেমিং কন্সোলের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া নামক এক ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যা তাদের দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে। যার ফলে দূরের জিনিস দেখতে তাদের কাছে ঝাপসা মনে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে দূরে থাকা এবং মুখ লুকিয়ে ডিজিটাল ডিভাইসের সামনে পড়ে থাকার কারণে এমন সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। সুতরাং অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে এগুলো বাদ দিতে হবে।

বিষন্নতা বা উদ্বেগ বৃদ্ধি করে

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয় যেসব শিশু কিংবা তরুনরা দীর্ঘক্ষণ টিভি কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে আষক্ত/অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক দিয়ে তাদের মাঝে মানসিক উদ্বেগ তৈরি হয়। যার ফলে তারা নিজেদের মূল্যহীন মনে করে বা তাদের আত্মমর্যাদা কমে যাওয়া অথবা ব্যক্তিগত বিষয়ে মন খারাপ তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা কমে যায়

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক জানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৪ হাজার শিশুর ওপর এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যেসব শিশু অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে আশক্ত, শারীরিক কসরত বা কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত না অথবা সঠিক সময় খাওয়া দাওয়া কিংবা বিনোদন মূলক কাজ থেকে নিজেকে বিরতে রাখে।তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অন্য শিশুদের চেয় অর্থাৎ যারা সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করে তাদের চেয়ে কম থাকে।

তাই গবেষকদের মতে ১৮ মাস বয়স হওয়ার আগে কোন শিশুদের স্ক্রিন দেখা উচিত নয়।এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক Dr Mohammadur Rahman বলেন ‘‘ কেউ যদি দীর্ঘক্ষণ যাবত স্ক্রিনের সামনে থাকে বা স্ক্রিন টাইমে আষক্ত হয় তখন তার মধ্যে এক ধরনের পরোক্ষ গ্রহিতা দেখা দেয়।

তার সামনে যদি এমন ভিডিও আসে যা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হয় না। সে সেগুলো গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ফলে ধীরে ধীরে তার মানসিক বুদ্ধিভিত্তিক ক্ষমতা লোপ পায়। একটা সময় এসে সে কঠিন কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার উপায়

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক দূর করতে /চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে বা উপরিক্ত সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায় সেটা হলো স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনা। কিন্তু কিভাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর এক গবেষণায় বলা হয়েছে মানুষ যদি প্রতিদিন কমপক্ষে ২ ঘন্টা করে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনতে পারে তাহলে সাধারণ মৃত্যুর হার ৫.৬২ ভাগ এবং হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর হার ৭.৯৭ ভাগ কমিয়ে আনতে পারবে।

পরিকল্পনা করুন

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক দূর করতে/স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করুন অর্থাৎ আপনার অবসর সময়ে টিভি, মোবাইল কিংবা কম্পিউটার না দেখে সেই সময় অন্য কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। তার জন্য আপনার অবসর সময়ে কি করা যেতে পারে সেটি পরিকল্পনা করুন।

যেমন: স্ক্রিন টাইমের পরিবর্তে গল্প কিংবা কবিতা পড়া, পরিবারের সদস্যদের সাথে বসে আড্ডা দেওয়া বা তাদের কাজে সাহায্য করা, নিজের শখ অথবা নতুন কোন কিছু শিখার চেষ্টা করা । বাড়ির ছাদ থাকলে সেখানে সবজি বাগান করা, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, কোরআন শরীফ পড়া ইত্যাদি।

সময় মতো ঘুমিয়ে পড়ুন

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচতে/ স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়া আবশ্যক। ঘুমানোর অন্তত ১ ঘন্টা আগে মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখা বন্ধ করা। এতে করে রাতের ঘুম ভালো হয়। এছাড়াও স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনতে নিজে সচেতন হন এবং পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করুন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বলা হয়েছে ১৮ মাস বয়সের শিশুদের স্ক্রিন টাইম করা একদম উচিত নয় এবং ২ বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডিভাইসের সঙ্গে পরিচয় করানো যেতে পারে। তবে সেই ভিডিও বা তথ্য যেন উচ্চমান সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে ২-৫ বছর বয়সের শিশুদের বাবা মাকে সঙ্গে রেখে দিনে ১ ঘন্টা করে উচ্চমান সম্পন্ন ভিডিও দেখতে পারবে। তবে এর বেশি স্ক্রিন টাইম করা একেবারে উচিত নয়।

৬-১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন স্ক্রিন টাইমের কারণে তাদের স্বাভাবিক ঘুম ও দৈনিক কর্মকাণ্ডে বাঁধা সৃষ্টি না হয়।   অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্তি পেতে,দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

আরো জানুনঃ

মোটা হওয়ার উপায় জেনে নিন।

চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *