অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন: জন্ম নিবন্ধন অথবা জন্ম সনদ একজন মানুষের প্রথম পরিচয়পত্র। শিশু জন্মের পর ৪৫ দিনের মধ্যে তার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা আবশ্যক। যেটি ২০০৪ সালে ২৯ নং ধারা পাশ করা হয়। যদিও একটি জরিপ থেকে জানা গেছে দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে সুধু মাত্র ১৫ কোটি মানুষের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে অর্থাৎ এখনো এক কোটি জনতা জন্ম সনদ বা পরিচয় পত্রের আয়ত্তের বাহিরে।
কিন্তু কেন এই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবো? জন্ম নিবন্ধন কেন আমাদের এত প্রয়োজন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাবেন আজকের পোস্টে। একই সাথে জানব অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম, জন্ম নিবন্ধন ফি ইত্যাদি সম্পর্কে।
জন্ম নিবন্ধন কেন প্রয়োজন?
একটি দেশের বাসিন্দা হিসেবে একজন ব্যক্তি সাধারণ পরিচয় পত্র বহন করে জন্ম সনদ। সাধারণত জন্ম সনদের মধ্যে ব্যক্তির নাম, লিঙ্গ, পিতা মাতার নাম, জন্ম তারিখ, বাসস্থান বা অবস্থানের ইত্যাদি উল্লেখ থাকে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে ?
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট/কাগজপত্র আপনার কাছে রাখতে হবে। যেগুলো হলোঃ
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা জন্ম সনদ।
- সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সনদ/ টিকার কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
- আবেদনকারীর (শিশুর) পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি
- শিশু বয়স যদি পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র।
আরো জানুনঃ অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ডাউন-লোডের উপায়
কোন কোন কাজে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন?
সাধারণত একজন ব্যক্তিকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত জন্ম সনদ প্রয়োজন। প্রাপ্তবয়স্কের পরে তার স্মার্ট কার্ড বা এনআইডি কার্ডকে বেশি গণ্য করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন আসতে পারে এই জন্ম সনদ। যেমনঃ
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
- ব্যাংক একাউন্ট তৈরি
- বিবাহ নিবন্ধ বা রেজিস্টার
- পাসপোর্ট তৈরি
- সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি
- ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি
- টিন সার্টিফিকেট তৈরি
- ট্রেড লাইসেন্স তৈরি
- ভোটার হওয়া
- এনআইডি সংশোধন ইত্যাদি।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়া আরও বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজন হতে পারে জন্ম সনদের। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় জন্ম সনদ এতটাই বাধ্যতামূলক যে, সেখানে আপনি জন্মসনদ দেখাতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপনার সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করানো আপনার দায়িত্ব।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কত টাকা লাগে ?
আবেদনকারীর বয়স যদি ৪৫ দিনের কম হয় তাহলে বিনামূল্যে অনলাইন অথবা অফলাইনে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন করতে পারেন। তবে শিশুর বয়স যদি ৪৫ দিনের ঊর্ধ্বে হয় তাহলে প্রতিবছর হিসাব করে ১০ টাকা করে ফি প্রদান করতে হবে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এর নিয়মঃ
বর্তমান সময়ে আপনি চাইলে পৃথিবীতে যেকোন প্রান্ত থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে প্রথমে চলে আসুন এই ঠিকানায়।
এখন আপনার সামনে উপরের ফরমটি আসবে যেখানে লেখা থাকবে নিম্মের কোন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন?
- জন্মস্থান
- বর্তমান ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
আপনি ঠিকানা নির্বাচণ করে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের পূর্বে অবশ্যই পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে দেখে ফরমটি পূরণ করবেন। এতে করে ভুল হওয়া সম্ভাবনা থাকবে না এবং পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
এখন আপনার সামনে নতুন আরেকটি পেইজ ওপেন হবে। এই পর্যায়ে আবেদনকারীর (শিশুর) নাম বাংলা ও ইংরেজিতে, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, দেশ, জেলা, বিভাগ, ডাকঘর, পোস্ট কোড, বাড়ি, হোল্ডিং নাম্বার ইত্যাদি নির্বাচণ করে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এ ৩য় ধাপে আপনাকে আরোও একটি পেইজ এ নিয়ে আসবে যেখানে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার বাসাতে হবে। উল্লেখ্য পিতা মাতার পরিচয় পত্রের নাম্বার গুলো বসানোর সাথে সাথে তাদের নাম ওয়েবসাইটে দেখাবে। পরবর্তী অপনশে যাওয়ার পূর্বে নাম গুলো মিলিয়ে নিবেন সঠিক আছে কিনা। সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী অপশনে আসার পরে কোনটিই নয় এবং জন্মস্থানের ঠিকানা যদি কারো স্থায়ী ঠিকানা হয় তাহলে সুধু মাত্র টিকমার্ক দিলেই হবে। আর যদি কারো ভিন্ন হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে স্থায়ী ঠিকানার সম্পুর্ণ পূরণ করতে হবে।
জন্ম স্থানের ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে যেভাবে করবেনঃ
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এ জন্ম স্থানের ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে একই অপশনে ক্লিক করে দিবেন। যদি ভিন্ন হয় তাহলে ভিন্ন এড্রেস দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হবে। সবগুলো তথ্য বসানো হয়ে গেলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
এই পর্যায়ে আবেদনকারী ব্যক্তির তথ্য দিতে হবে। অর্থাৎ উক্ত জন্ম নিবন্ধনটি কোন ব্যক্তি করছেন। আবেদনকারী নিজ, পিতা, মাতা, ভাই, বোন, অথবা অন্য কেউ। আবেদনকারী নিজে আবেদন না করে যদি অন্য কেউ করে তাহলে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিতে হবে।
তারপর পিতার মোবাইল নাম্বার দিয়ে নিম্মে তথ্য সংযোজন করার অপশন পাবেন। সেখান থেকে আপনার তথ্য গুলোর ছবি বা পিডিএপ কপি জমা করতে হবে। একাধিক তথ্য সংযোজন করা হয়ে গেলে পরবর্তী ক্লিক করুন।
এখন আবেদনকারীর সব তথ্য দেখানো হবে। সব গুলো তথ্য সময় নিয়ে ভালোভাবে যাচাই করে নিন। কোন ভুল পেলে পূর্ববর্তী অপশনে ক্লিক করে ঠিক করে নিতে পারবেন।
আবেদনের সময় যে যে বিষয়ে নজর দিবেন
- আবেদনকারীর নামের সঠিক বানান
- জন্ম তারিখ
- পিতা মাতার নামের বানান
- পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন অথবা পরিচয় পত্রে নাম্বার ইত্যাদি।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এর ক্ষেত্রে উপরিউক্ত তথ্য গুলো ঠিক থাকলে সাবমিটে ক্লিক করুন। তাহলে আবেদনটি সঠিকভাবে সাবমিট সম্পন্ন হবে।সর্বশেষ আপনার আবেদন নাম্বার সহ একটি স্কিনশর্ট বা কোথাও আবেদন নাম্বার নোট করে নিবেন। কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করলে আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি অব্যশই বের করে নিবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরঃ
- প্রশ্নঃ একাধিকবার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা যাবে কিনা ?
- উত্তরঃ না। ২০০৪ সালে ২১ ধারা অনুযায়ী একই ব্যক্তি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধের আবেদন করা দন্ডনীয় অপরাধ।
- প্রশ্নঃ জন্ম নিবন্ধনটি সম্পন্ন হয়েছে কিনা কি করে বুঝব ?
- উত্তরঃ অনলাইনে এই ঠিকানায় গিয়ে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে যাচাই করতে পারবেন ।
- প্রশ্নঃ আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করব বিভাবে?
- উত্তরঃ নতুন স্বাক্ষরের নমুনা সহ উপযুক্ত প্রমাণাদি দিয়ে আবেদন করতে হবে। ।
- প্রশ্নঃ ID কার্ডে পিতা-মাতাকে মৃত উল্লেখ করব কিভাবে?
- উত্তরঃ পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত সনদ সহ দরখাস্তে উল্লেখ করতে হবে।
- প্রশ্নঃ আমার আইডি কার্ডের ছবি অস্পষ্ট এটি পরিবর্তনের উপায় কি?
- উত্তরঃ ছবি পরিবর্তণের জন্য নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নিবন্ধ অফিসে আবেদন করুন।
- প্রশ্নঃ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে ID কার্ড থেকে স্বামী বা স্ত্রীর নাম বাদ দিব কিভাবে?
- উত্তরঃ স্বামী বা স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি ও তালাকনামা সহ থানা জেলা ও উপজেলা অফিসের নিকট আবেদন করুন।
- প্রশ্নঃ বিয়ের পর ID কার্ডে স্বামীর নাম সংযুক্তির পক্রিয়া কি?
- উত্তরঃ স্বামীর আইডি কার্ডের ফটোকপি ও নিকাহনামা সহ সংশ্লিষ্ট থানা / উপজেলা অফিসের নিকট আবেদন করুন।
- প্রশ্নঃ ভুলে দুই বার রেজিস্টেশন করে ফেললে সমস্যা হবে কিনা?
- উত্তরঃ সংশ্লিষ্ট থানা,উপজেলা নির্বাচন/ জেলা অফিসে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
- প্রশ্নঃ একজন ব্যক্তি কয়টি NID ব্যবহার করতে পারবেন?
- উত্তরঃ একজন ব্যক্তির একটি মাত্র আইডি কার্ড ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।
- প্রশ্নঃ NID নাম্বার কারো ১৩ কারো ১৭ হয় কেন?
- উত্তরঃ ২০০৮ সালের পূর্বে NID নাম্বার ছিল ১৩ ডিজিটের ২০০৮ এর পর ১৭ ডিজিটের ব্যবহৃত হয়।