এলার্জি,চুলকানি,ঘামাচি ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্তির উপায়।
গ্রীষ্মকাল মানেই তীব্র তাপ, অসহ্যকর গরম ও ক্লান্তিকর সময়। যার ফলে সৃষ্ট এলার্জি, ঘামাচি ও দুর্গন্ধ যা সবার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাদের জন্য আজকের পোস্টি । এই পোস্টে আমরা দেখব কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। তো চলুন শুরু করি।
এলার্জি:
এলার্জি একটি সাধারণ রোগ এটি যে কারো হতে পারে। তবে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা যায়। যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ভালো হয়ে যায় কিন্তু আবার অনেকে নতুন করে এই রোগ আক্রান্ত হয়। এলার্জি আসলে কি? এটি কেন হয়? এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
এলার্জি কি এবং কেন হয় ?
এলার্জি হচ্ছে আমাদের দেহ কোন খাবার বা বস্তুর প্রতি যেই বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি। এলার্জির ফলে গা ফুলে যাওয়া, চুলকানি বা লালচে হয়ে যাওয়া, ফোস্কা পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
এলার্জি আমাদের দেহের জন্য একটি উপকারী উপাদান। এটি ক্ষতিকারক বিভিন্ন জিনিস থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। তবে অনেক সময় এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয় এমন জিনিসকে ক্ষতিকারক ভেবে তার প্রতি যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি এলার্জি। এটি যেকোন কারণে হতে পারে। যেমনঃ
- নির্দিষ্ট খাবার-দাবারের কারণে।
- ঘামের কারণে।
- ধুলাবালির কারণে ।
- গরম অথবা ঠান্ডা পরিবেশের কারণে ।
- গৃহপালিত প্রাণীর কারণে ।
- বিভিন্ন ঔষধের কারণে ইত্যাদি।
নির্দিষ্ট কিছু খাবারে কারণে এলার্জি হওয়ার ঝুকি বেশি থাকে। যেমন: বেগুন, চিংড়ি মাছ, গরুর বা খাসির মাংস, ইলিশ মাছ, বাদাম, হাঁসের ডিম,হাঁসের মাংস ইত্যাদি।
এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
প্রথম পর্যায়ে কোন খাবার বা ঔষধের প্রতি আপনার এলার্জি আছে সেটি নির্ণয় করুন এবং যতটা সম্ভব সেটি এড়িয়ে চলুন। এলার্জির প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ সাজেশন করে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে সেটি সেবন করতে পারেন।
যেসব খাবারে এলার্জি আছে সেগুলো খাওয়া একেবারে বাদ না দিয়ে একটু একটু করে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ঘামাচি কেন হয় ?
ঘামাচি এক প্রকারের চর্মরোগ। রোদ্রের প্রখর তাপে আমাদের শরীরে ঘামগ্রন্থির নালি দিয়ে ঘাম বের হয়। অনেক সময় শরীরের ময়লার কারণে এসব ঘামগ্রন্থির নালি বন্ধ হয়ে যায়। যা ত্বকের বিভিন্ন স্তরে পানি জমে গিয়ে ঘামাচি তৈরি করে। যার থেকে সৃষ্ট হয় দুর্গন্ধ ও চুলকানি। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন মেডিসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও ঘামাচি হয়ে থাকে।
ঘামাচি দূর করার উপায়
আপনি চাইলে ঘরোয়া কিছু টিপস বা ট্রিটমেন্ট ফলো করে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেগুলো নিম্মে তুলে ধরা হলো।
বরফ
আইসব্যাগ বা একটি বোতলে নরমাল পানি ঠুকিয়ে সেটাকে ফ্রিজের ডিপে রেখে কঠিন বরফ করে নিন। তারপর সেটি দিয়ে ঘামাচির ওপর সেঁক দিন। এটি আপনি ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন।
নিমপাতা
প্রথমে খানিকটা নিম পাতাকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে শিল পাটায় অথবা ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর তার সঙ্গে পরিমান মতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর সেটি ঘামাচিতে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে সব ঘামাচি মরে যাবে এবং অসহ্যকর চুলকানি থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
অ্যালোভেরা
হলুদের সঙ্গে অ্যালোভেরা রস মিশিয়ে ঘামাচি যুক্ত স্থান গুলোতে মেখে ৫-১০ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ধুঁয়ে ফেলুন। এতেও অনেক উপকার পাবেন।
মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী। তবে গবেষণায় দেখা গেছে এটি চর্ম রোগের ঔষধ হিসেবেও দারুন কাজ করে। মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেটি ঘামাচির উপর লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে দিন। মিশ্রণটি সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বৃষ্টির পানি
ঘামাচি দূর করতে বৃষ্টি পানিও অনেক ভূমিকা রাখে। তাই ঘামাচি দূর করতে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারেন। পানিতে ভিজার পূর্বে অব্যশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার শরীর ঘামছে কিনা। যদি শরীরে ঘাম থাকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিন। কেননা ঘাম অবস্থায় গোসল করলে জ্বর বা সর্দি হতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগতে পারে।
লেবু
ঘামাচির প্রভাব কমাতে লেবুর রসের ভুমিকা অপরিসীম। লেবুতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ঘামাচি দূর করতে খুব কার্যকরী। ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস লেবুর রসের শরবত পান করতে পারেন।
আলু
সবার বাসায় কম বেশি আলু পাওয়া যায়। একটি বা দুটি আলুকে ব্লেন্ডা করে পেস্ট করে নিন। তারপর ঘামাচি যুক্ত স্থান গুলোতে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। দেখবেন আস্তে আস্তে ঘামাচি দূর হয়ে গেছে।
আদা
আদা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য। গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি আদা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। যাদের ঘামাচির সমস্যা আছে তারা এক টুকরো আদাকে কুচি করে কেটে গরম পানিতে মিশিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঘামাচি যুক্ত স্থান গুলোতে মুছে দিতে পারেন। এতেও অনেক উপকার পাবেন।
সচেতনতা
ঘামাচি দূর করতে যতটা সম্ভব রোদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আলো বাতাস চলাচল করতে পারে এমন ঘরে থাকুন। গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন: পাখা বা এসি ব্যবহার করুন।
আরো দেখুনঃ
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জানুন।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় জানুন।
তথ্য সংগ্রহঃ
ডাঃ হাসান মাহমুদ। (চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ)