কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন।
মন ও দেহ একে অপরের পরিপূরক অর্থাৎ আপনার দেহ ভালো থাকলে আপনার মন ও ভালো থাকবে। তাই মনকে খুশি রাখতে দেহের সুস্থতায় নজর দেওয়া জরুরি। আজ আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ কি? কারা এই রোগে ভোগেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানবো।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
এটি একটি সাধারণ সমস্যা এটি যেকোন বয়সের যেকারো হতে পারে। হঠাৎ কয়েক ঘন্টা পায়খানা বন্ধ? দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে আছেন? তবুও পেট পরিষ্কার হচ্ছে না? দীর্ঘক্ষণ পায়খানা না হওয়ায় অসহ্যকর যন্ত্রণায় ভুগছেন? এমন পরিস্থিতে কম বেশি আমরা সবাই পড়ি। কিন্তু কেন? দৈনন্দিন অস্বাস্থ্যকর ও বাজে খাদ্যাভ্যাসের কারণে এমনটি হয়। কখনও কখনও অপুষ্টিকর খাবার দাবারের ফলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
কোষ্ঠ শব্দের অর্থ হচ্ছে- মল আর কাঠিন্য শব্দের অর্থ হচ্ছে- কঠিন। কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দের অর্থ হল- কঠিন মল ত্যাগ বা শক্ত অথবা শুষ্ক মল ত্যাগ। সপ্তাহে যদি ৩-৪ বার অথবা তার চেয়ে কম মল ত্যাগ করেন। অথবা মল ত্যাগ করলেও সেটি যদি আশানুরূপ না হয়। তাহলে বুঝতে হবে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে।
কারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বেশি ভুগেন ?
গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক ব্যক্তিরা এই সমস্যায় বেশি ভুগেন। এছাড়াও যেসব রোগী অন্য রোগের কারণে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না, তারাও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় বেশি ভোগেন। তবে পুরুষদের থেকে নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যেসব শিশু মায়ের দুধ ছেড়ে ভারী খাবার গ্রহণ করা শুরু করছে তাদের মধ্যেও এই রোগের লক্ষণ্য দেখা যেতে পারে।
তবে রোগটি হলে চিন্তার বিষয় না। এটি যেকোন বয়সে যেকারো হতে পারে। তাই এটি নিয়ে বিচলিত না হয়ে সঠিক পরিচর্যা পেলে খুব দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যায়। কিন্তু যদি দেখেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় আপনার মল কালো রং ধারণ করছে অথবা আপনি রক্তশূণ্যতায় ভুগছেন তাহলে দেরি না করে খুব দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় জানতে আমরা এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বো। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা এই সময়ে প্রচুর পরিমানে পানি, আঁশ যুক্ত ফলমূল ও শাক-সবজি খাবেন। বিশেষ করে মৌসুমী ফলের সময় যতটা সম্ভব ফল খাওয়া যায় তত বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যের কম ঝুকিতে থাকবেন।
এছাড়াও রোগটি দূর করতে শাক-সবজির মধ্যে পালং শাক, পুঁই শাক, ঢেঁড়স, কচুরমুখি ও কলমিশাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে এগুলো যদি অধিক পরিমানে খাওয়া যায় তাহলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। ফলের মধ্যে থেকে কলা, গাজর, শসা, পেয়ারা খেতে পারেন এগুলোতেও অনেক আঁশ পাওয়া যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় এ এতক্ষণ বললাম কি কি খাবেন। এখন বলব এ সময়ে কোন কোন খাবার গুলো খাওয়া যাবে না বা কম খেতে হবে সেগুলো হল: প্রক্রিয়াজাত খাবার ফাস্টফুড কেক, বার্গার, চিপস, চিকেন ফ্রাই, আলু ফ্রাই, গরু ও খাসির মাংস ইত্যাদি।
এসব খাবার সব সময় কম খাওয়া উচিত। পক্ষান্তরে প্রচুর পরিমানে শাকসবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে শারীরিক পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে পারেন অর্থাৎ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়তে পারেন।
পায়খানা চেপে রাখা
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন পায়খানা আসলে তাৎক্ষণাত টয়লেটে যেতে চায় না। কিছুটা দেরি করে যান। আবার যাদের এই রোগ আছে তারা টয়লেটে যেতে বিরক্তবোধ করেন। কারণ তখন তাদের মলত্যাগ করতে অনেকটা কষ্ট হয়। কিন্তু এ ভুল মোটেও করা যাবে না।
আপনি যদি মল চেপে রাখানে সেটা আপনার দেহ থেকে ক্রমশ পানি শুষে নিবে এতে করে পানিশূন্যতা বা ক্লান্তিভাব অথবা মল জমে আরোও শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় মেনে সঠিক সময় ওয়াশ রুমে যাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কেউ যদি অতিরিক্তমাত্রায় ঔষধ সেবন করেন। অথবা দৈনিক ৫টির বেশি ঔষধ সেবন করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভবণা বেশি থাকে। এছাড়াও ব্যাথা নাশক ঔষধ, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, আয়রন ট্যবলেট ইত্যাদি সেবন করেন তারাও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুকিতে থাকেন। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় এ যেকোন ঔষধ সেবনের পূর্বে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সচেত থাকুন।
মানসিক চিন্তা
অনেক সময় অতিরিক্ত মানসিক চিন্তার ফলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে মানসিক চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। অবসর সময়ে বসে না থেকে মোবাইলে এন্টারটেনমেন্ট ভিডিও দেখা বা হাতের কাজ করা ইত্যাদি বিষয়ে মনযোগ দিতে পারেন। এতে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় এ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল ২০ মিনিট করে হাটা, দৌড়ানো, সাইকেলিং, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি করা যেতে পারে। এতেও অনেকটা উপকৃত হবেন।
আপনি যদি ২-৩ মাসের বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় বাদ দিয়ে খুব দ্রুত একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় যদি পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় তাহলে ব্যথা হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
এই রোগের সাধারণ চিকিৎসা গুলো হল: রক্ত পরিক্ষা অর্থাৎ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। মল পরীক্ষা- মলের সাথে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা সেটা দেখা হয়। এছাড়াও হরমোন, ডায়াবেটিস, টিউমার, পলি, আলসার ইত্যাদি পরিক্ষা করা লাগতে পারে।
শেষ কথাঃ
এটি মারাত্নক ব্যধি না হলেও বহুদিন ধরে চলতে থাকলে এটি থেকে জটিল রোগ যেমন, পাইলস, ভগন্দর, মলদ্বার ক্যান্সার, মলদ্বার টিউমার ইত্যাদি হতে পারে। সাধারণত খাদ্য, খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য পরিবর্তন করার পর এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় ফলো করার পরও যদি এটি দূর না হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
আরো পড়ুনঃ
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।
তথ্য সংগ্রহঃ
ডাঃ মোঃ নাজমুল হক
সহযোগী অধ্যাপক
এমবিবিএস, এমডি (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী) সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান লিভার, পরিপাকতন্ত্র ও অগ্নাশয় রোগ বিভাগ বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বারের ঠিকানা: বাড়ী-১ ও ৩, রোড-২, ব্লক-বি,মিরপুর-১০, ঢাকা।