খতিয়ান অনুসন্ধান করুন ঘরে বসে অনলাইনে।
খতিয়ান অনুসন্ধান করা এখন খুব সহজ কাজ। খতিয়ান একটি ফারসি শব্দ। জমির মালিকানা স্বত্ব ও হিসাব রক্ষার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট।এটি জমির খাস মালিকানাদের তালিকা নিশ্চিত করে। বিভিন্ন প্রয়োজনে খতিয়ানের দরকার হতে পারে। যেমন: জমি ক্রয়, বিক্রয়, দাগ নম্বর, রেকর্ড ও মলিকানা নির্ণয় ইত্যাদি।
খতিয়ান কি ?
খতিয়ান হচ্ছে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাবের সমষ্টিগত একটি রুপ। যেখানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনের পক্ষসমূহকে পৃথক পৃথক শিরোনামে ভাগ করা হয়। মূলত ভূমি উন্নয়ন কর্তৃক কর আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত নথি বা ডকুমেন্টকে খতিয়ান বলা হয়।
আজকের পোস্টে আমরা খতিয়ান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরবো যেমন: খতিয়ান কি? ও কত প্রকার? আর এস খতিয়ান দেখার নিয়ম, ডিসএস/সিএস খতিয়ান দেখার নিয়ম,অনলাইনে এস এ খতিয়ান বের করার নিয়ম ইত্যাদি।
খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি?
খতিয়ান কয়েকটি পদ্ধতিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন:
- আর. এস খতিয়ান
- এ. এস খতিয়ান
- বি. এস খতিয়ান ও
- সি. এস খতিয়ান
আর. এস খতিয়ান: প্রথমবার খতিয়ানের পর তাতে ভুল ত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যেই জরিপ করা হয় তাকে আর. এস খতিয়ান।
এ. এস খতিয়ান: ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়। এর পর পাকিস্তানি শাসনামলে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত করে নতুন যে জরিপ প্রকাশ করা হয় তাকে এ এস খতিয়ান বলে।
বি.এস খতিয়ান: ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে বিদ্যমান জরিপকে বি, এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলা হয়।
সি.এস খতিয়ান: ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত পরিচালিত উপমহাদেশের প্রথম জরিপকৃত খতিয়ানকে সি. এস খতিয়ান বলা হয়।
খতিয়ান অনুসন্ধান করার উপায়
ওয়েবসাইট থেকে কিছু দিন আগে ই-পর্চার দাগ নম্বর দিয়ে খুব সহজে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করা যেত। কিন্তু ই পর্চা ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও সার্ভার আপডেটের কারণে এখন আর দাগ নম্বর দিয়ে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে অনেকের সমস্যা হতে পারে। তাই আজকে পোস্টে আমি আলোচনা করব কিভাবে দাগ নম্বর দিয়ে যেকোন জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করবেন।
কম্পিউটার বা মোবাইলে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে প্রথমে ফোনের ক্রোম ব্রাউজারটি ওপেন করুন তারপর সার্চ বারে eporcha লিখে সার্চ করুন এবং সার্চ রেজাল্টে আসা প্রথম সাইটে প্রবেশ করুন। তাহলে আপনেরা এরকম একটি ইন্টারপেইজ দেখতে পাবেন।
এখানে দুই ধরনের খতিয়ান পদ্ধতি দেখতে পাবেন। সার্ভে খতিয়ান ও নামজারি খতিয়ান। ডিফল্ট ভাবে আমি সার্ভে খতিয়ানটি বেছে নিলাম। তারপর একটু নিচে স্ক্রোল করে প্রথমে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করুন। তারপর জেলা, উপজেলা ও খতিয়ানের ধরণ সিলেক্ট করুন। আপনার সামনে আরোও দুটি অপশন শো করবে। সেখান থেকে মৌজা ও খতিয়ানের তালিকা বেছে নিয়ে আপনার খতিয়ানটি ডাউন-লোড করে নিতে পারবেন।
কিন্তু আপনার যদি খতিয়ন নম্বর জানা না থাকে বা কোন খতিয়ানটি মনে না থাকে তাহলে দাগ নম্বর দিয়ে আপনার খতিয়ানটি অনুসন্ধান করতে পারবেন। দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে যে পর্যন্ত এসেছেন সেখানে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন “অধিকতর অনুসন্ধান” একটি অপশন আছে সেখানে ক্লিক করুন।
ক্লিক করার সাথে সাথে আপনি আরেকটি পেইজ পেয়ে যাবেন যেখানে মালিকের নাম ও দাগ নম্বর দিতে হবে। তথ্য দুটি বসিয়ে “খুজুন” বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার সামনে খতিয়ান নম্বর চলে আসবে। এখন খতিয়ান নম্বরে ডাবল ক্লিক করে উপরের দিকে স্ক্রোল করুন। তারপর বাম দিকে স্কোল করুন। তাহলে আপনার খতিয়ান সম্পর্কিত তথ্য গুলো দেখতে পাবেন।
এখন বিস্তারিত দেখতে চাইলে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করুন। আপনি খতিয়ান নম্বর ও দাগ নম্বর সহ বিস্তারিত দেখতে পাবেন। এখন একটি স্ক্রিনশর্ট নিয়ে ডকুমেন্টটি প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি খতিয়ানের অনলাইন কপি বা সার্টিফাইড কপিটি ডাউন-লোড করতে চান তাহলে “খতিয়ান আবেদন” এ ক্লিক করুন।
নতুন আরেকটি পেইজ পেয়ে যাবেন সেখানে আপনার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করুন। যেমন:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর
- জন্ম তারিখ
- মোবাইল নম্বর
- গ্রাম ও
- ইমেইল
সবগুলো তথ্য পূরণ করে নিচে থেকে খতিয়ানের ধরন নির্বাচন করুন। অর্থাৎ আপনি কি ধরনের খতিয়ান চাচ্ছেন। অনলাইন কপি বা সার্টিফাইড কপি উভয় ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফি পরিশোধ বাবদ আবেদন করতে পারবেন। আর যদি ডাক যোগাযোগে খতিয়ান কপি পেতে চান তাহলে ১৪০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। বিকাশ, রকেট, নগদে ও উপায় মোবাইল ব্যাংকিং এ বিল পরিশোধ করা যাবে।
বিল পরিশোধ করতে যেকোন একটি অপশন বেছে নিন। তারপর নিচে থেকে ক্যাপচা পূরণ করে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার বিকাশ, রকেট, নগদ বা উপায় মোবাইল নম্বর ও পিন দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। নিয়ম মেনে আবেদন করলে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে খতিয়ান কপিটি আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। উল্লেখিত নিয়মটি অনুসরণ করে খুব সহজে অনলাইনের মাধ্যমে যেকোন জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন।ব
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনার খতিয়ানটি যদি আর. এস খতিয়ান, এ. এস খতিয়ান, বি. এস খতিয়ান ও সি. এস খতিয়ান হয়ে থাকে তাহলে খতিয়ান অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় খতিয়ানের ধরন হিসেবে আপনার খতিয়ানটি সিলেক্ট করুন। তাহলে খুব সহজে যেকোনো ধরনের খতিয়ান অনুসন্ধ্যান করতে পারবেন।
ই খতিয়ান/ ই পর্চা খতিয়ান যাচাই (মোবাইল অ্যাপে)
eporcha ওয়েবসাইট ছাড়াও মোবাইল অ্যাপ থেকে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন। জমির খতিয়ান অনুসন্ধান অ্যাপের নাম eKhatina। অ্যাপের মাধ্যমে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে eKhatina মোবাইল অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। তারপর অ্যাপটি ওপেন করুন এবং খতিয়ান অনুসন্ধানের কাজ চলিয়ে যান। অ্যাপটি ওপেন করলে এরকম একটা পেইজ দেখতে পাবেন।
প্রথমে খতিয়ান সিলেক্ট করে যথাক্রমে নিম্নের তথ্য গুলো দিয়ে “অনুসন্ধান” বাটনে ক্লিক করুন। তথ্য গুলো হলো:
- বিভাগ
- জেলা
- উপজেলা
- খতিয়ান ধরন
- মৌজা
- খতিয়ান নম্বর ও
- মালিকের নাম
সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার জমির খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। তবে আপনি চাইলে সরাসরি নিকটস্থ ভুমি অফিস থেকে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারেন। জমি, দলিল বা খতিয়ান সম্পর্কিত কোন সমস্যায় পড়লে সরাসরি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসায়াল হটলাইন নম্বর ১৬১২২ তে যোগাযোগ করুন।
ভূমি, জন্ম নিবন্ধন, NID ও সরকারি সেবা মূলক তথ্য পেতে অব্যশই আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
বিস্তারিত তথ্য পেতে পড়ুনঃ
পল্লী বিদ্যুৎ বিল চেক অনলাইনে খুব সহজে।
খুব কম দামে ইন্টারনেট অফার সকল অপারেটরে।