চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।
আমাদের চুল পড়া বন্ধ হউক এটাই কাম্য। কিন্তু বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কমন সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত মাত্রায় চুল পড়া। এটি নারী বা পুরুষ যে কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রতি দিনকার অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাসের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অনেকটাই কষ্টকর।
আপনিও যদি চুল পড়া সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টির আপনার জন্য। এই পোস্টে আমরা চুল পড়া, চুল ছিঁড়ে যাওয়া বা ফেঁটে যাওয়া কিংবা কিভাবে চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে জানবো।
চুলের সৌন্দর্য
মানুষের সৌন্দর্যের ৪০-৫০% হচ্ছে তার চুল। যাদের চুল ঘন মসৃণ ও লম্বা তাদের দেখতেও ততটা স্মার্ট ও সন্দরী লাগে। পক্ষান্তরে যাদের চুল পাতলা, খাটো ও রুক্ষ তাদের সৌন্দর্য অতটা ফুটে ওঠে না। তাই অধিকাংশ ব্যক্তি নিজের চুলকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকেন এবং সবসময় ভাবেন কিভাবে চুলের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়? কিভাবে চুলকে কালো, ঘন ও লম্বা বানানো যায় ইত্যাদি।
চুল পড়া সমস্যার কারণ
চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়া বা খুশকি ওঠা এটি একটি সাধারণ সমস্যা। মূলত অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হেয়ার কালার করা, পুষ্টিহীনতা ও অনিয়মিত চুল আঁচড়ানো এবং মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল যুক্ত জেল কিংবা শ্যামপু ব্যবহার করা, হঠাৎ হরমোনের পরিবর্তন, গর্ভাবস্থা, মেনোপজের পর হরমোনের তারতম্য এর কারণেও এই সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। চুলের আগা ফেটে যাওয়ার কারণে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয় ফলে চুল সহজে বড় হতে পারে না।
কিন্তু কিভাবে এই সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? এই সমস্যা গুলোর চিরস্থায়ী কোন প্রতিকার আছে কিনা? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজেন অনেকে। তাহলে চলুন জেনে নি এই সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো নিন্মরুপ / চুলের যত্ন
চুলের আগা ফাটা বা চুল রুক্ষ হওয়ার জন্য প্রধান দায়ী হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও চুলের যত্ন না নেওয়া। আপনি যদি এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন। এছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপকরণ ব্যবহার করে এই সমস্যা থাকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। যেমন-
জবা ফুলের হেয়ার প্যাকঃ
চুল পড়া বন্ধ বা চুলের হারনো সৌন্দর্য ফিরে পেতে জবা ফুলের হেয়ার প্যাক অনেকটাই কার্যকরী। আধাকাপ খাটি নারকেলের তেলকে হালকা আঁচে গরম করে নিন। এবার ঐ তেলের ওপর একটি বা দুটো জবা ফুল এবং কয়েকটি সতেজ নিমপাতা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম করে নিন। অবশ্যই এই সময় চুলার আঁচ কম রাখতে হবে।
এরপর কয়েক মিনিট মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে রেখে দিন। তারপর মিশ্রণটি আপনার চুলেরে গোড়ায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে দিন। এই উপকরণটি সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে খুব দ্রুত এর সুফল দেখতে পাবেন।
আলুর রসঃ
চুলের গোড়া মজবুত ও চুলকে ঘন সুন্দর করতে আলুর রস খুব বেশি কার্যকরী। একটি আলুকে শিল পাটায় বেটে অথবা ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করে একটি পরিষ্কার ত্যানার সাহায্যে রস নিংড়ে নিন। তারপর চুলের গোড়ায় সেই রস ভালোভাবে ম্যাসাজ করে দিন। মিনিট খানেক পর কুসুম গরম পানি বা হেয়ার শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও পরিমান মতো আলুর রসের সঙ্গে ১/২ টেবিল চামচ নারকেলের তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর যেকোন ভালো ব্যান্ডের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই উপকরণটি চুলের সৌন্দর্য ফিরে পেতে এবং চুলকে ঘন সুন্দর করতে সাহায্য করবে।
একটি মাজারি সাইজের পেয়াজ ও অর্ধেক আলুকে শিলপাটায় বেটে রস বের করে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করুন অনেকটা উপকার পাবেন।
নারকেলের তেলঃ
চুল পড়া বন্ধ করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে খাটি নারকেলের তেল ব্যবহার করুন এবং সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। নারকেলের তেল শুষ্ক চুল ও মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধির জন্য খুব বেশি কার্যকরী।
অ্যালোভেরা জেলঃ
একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিন। তারপর সেই জেল মাথায় লাগিয়ে ঘন্টাখানেক পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরা জেল চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ডিমের কুসুমঃ
প্রথমে একটি ডিম থেকে কুসুম আলাদা করে নিন। তারপর ডিমের কুসুমের সঙ্গে ১ চা চামচ অলিভওয়েল ও এক চা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে ১ থেকে দেড় ঘন্টা পরে ভালো কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অলিভ অয়েলঃ
চুল পড়া বন্ধ করতে বা চুলকে কালো ও ঝলমলে রাখতে অলিভ অয়েল খুব বেশি কার্যকারী। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ব্যক্তিগত ভাবে নিজেও চুল, দাড়ি ও হাতে মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতেন। কেননা অলিভ অয়েল চুলের সাথে সাথে ত্বকের জন্যও অনেকটা উপকারী। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় চুলে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রসঃ
সাপ্তাহে ১ দিন করে চুলের গোড়ায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। এটি নতুন চুল গজাতে ও চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। একটি পেঁয়াজকে শিলপাটায় বেটে রস আলাদা করে নিন। তারাপর সেই রস চুলে লাগিয়ে ১০-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
নিম পাতার নির্যাসঃ
চুল পড়া বন্ধ করতে নিম পাতার নির্যাস চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি উপকরণ। এটি ব্যবহারে চুল মসৃণ হয়, খুশকি দূর হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। পরিমান মতো কতগুলো নিম পাতাকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপর সেই পানি ঠাণ্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করে সাপ্তাহে কমপক্ষে একবার করে ব্যবহার করুন। তবে সম্ভব হলে প্রতিদিনের পানি প্রতিদিন তৈরি করে ব্যবহার করা ভালো।
মেথিঃ
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মেথি ও লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। মেথি ও লেবুর রসে যথাক্রমে আয়রন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি রয়েছে যা চুল পড়া বন্ধ করে এবং খুশকি দূর করে। প্রথমে ২ চা চামচ মেথিকে সারারাতের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালে মেথি গুলোকে ভালো করে বেটে নিন এবং তার সঙ্গে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করুন।
এবার উপকরণটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবে কয়েক মিনিট রেখে দিন। তারপর চুলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করতে পারেন এতে ধীরে ধীরে চুল পড়া বন্ধ করবে।
হেয়ার স্ট্রেচঃ
চুলকে সোজা ও সুন্দর করতে আমাদের মধ্যে অনেকেই হেয়ার হিটার বা হেয়ার স্টেচ ব্যবহার করি। যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।হেয়ার স্ট্রেনজার চুলকে ড্যামেজ করে এবং চুলের পুষ্টি নষ্ট করে যার ফলে চুল ছিঁড়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদির মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব হেয়ার স্ট্রেচ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
স্বাস্থ্যকর খাবারঃ
সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যান্ত জরুরি। বিশেষ করে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা চুলকে সুস্থ্য ও সবল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য। তবে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যেসব খাবার খাবেন। যেমন: সামুদ্রিক মাছ, হাঁস মুরগি, ডাল, গাজর, শশা, টমেটো, লেবু, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম, মরশুটি, দুধ, মধু, কালোজিরা ইত্যাদি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
অনিয়মিত ঘুম বা অতিরিক্ত টেনশন চুলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন কম পক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যান্ত জরুরি। যেটি শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখে।
শেষ কথাঃ
চুল পড়া বন্ধ করার অনেকগুলো কারণ ও প্রতিকারের উপায় আমরা জেনেছি। এগুলোর মধ্যে যেটি আপনার ত্বকের জন্য সহনীয় কিম্বা ব্যবহার করার পর ভালো মনে করেন সেটি ব্যবহার করতে পারেন। আশাকরি লেখাটি আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
আরো জানুনঃ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি? ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার উপায়।
তথ্য সংগ্রহঃ
ডাঃ আবুল খায়ের ভুঁইয়া
MBBS,MCPS, FCPS (Medicine) MRCP (United Kingdom)-Professor, Department of Medicine International Medical College, BMDC. প্রোফাইল