ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ঝামেলা ছাড়াই।

শেয়ার করুন

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনঃ NID বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড এটি একটি ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র বা বায়ো ডাটা। যেটি একজন ব্যক্তির নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট বা ব্যক্তি শনাক্তকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই কোন  ঝামেলা ছাড়াই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করুন। NID বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র এটি অনেক গুলো কাজে প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • ব্যক্তিগত পরিচয়
  • পাসপোর্ট বা ভিসা
  • জমি ক্রয়বিক্রয়
  • ব্যাংকিং লেনদেন
  • পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষা
  • ব্যবসা বানিজ্য
  • Tin সার্টিফিকেট তৈরি
  • প্রতিষ্ঠান নির্মাণ
  • চাকুরি
  • বিয়ে-শাদি
  • নগদ অর্থ লেনদেন
  • মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় NID ভুল বা তথ্যের গরমিল। যার কারণে দৈনন্দিন জীবন যাপনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা জরুরী। আসুন জেনেনি কিভাবে NID কার্ডের বিভিন্ন ভুল তথ্য সংশোধন করা যায়। সাধারণত আমাদের NID কার্ডে যে ভুল গুলো দেখা যায় তা হলোঃ-

  • ব্যবহারকারীর নামের বানান বা উপাধিতে ভুল
  • পিতা বা মাতার নামের বানান ভুল
  • NID জন্ম তারিখে ভুল ইত্যাদি।

আপনিও যদি ওপরের কোন একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টি আপনার জন্য। আজ আমরা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ব্যাপারে আলোকপাত করব।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে

আপনি যদি ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চান তাহলে আপনার নিকট অব্যশই কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা লাগবে। যা নিচে তুলে ধরা হলঃ-

  • পিতা-মাতার আইডি কার্ড
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
  • ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কপি, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • সার্ভিস বইয়ের কপি বা এমপিও শীট ইত্যাদি।

উল্লেখিত ডকুমেন্ট গুলোর যেকোন দুটি ডকুমেন্ট দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়। তবে তথ্য সংশোধনের ধরণের ওপর নির্ভর করবে। আপনার ক্ষেত্রে কোন ডকুমেন্ট গুলো প্রযোজ্য হবে।

NID কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র

  • অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • SSC বা HSC অথবা সমমানের সনদ
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • বিবাহের কাবিন নামা
  •  সার্ভিস বহি বা এমপিও সিট

আরও জানতে পড়ুনঃ  NID কার্ড ডাউন-লোড, যাচাই ও সংশোধন । 

NID কার্ডের নাম সংশোধন করতে যে কাগজ পত্র লাগবে

  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • SSC বা HSC অথবা সমমানের সনদ বা সার্টিফিকেট
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটো কপি
  • বিবাহের কাবিন নামা
  • সার্ভিস বইয়ের কপি বা এমপিও শীট
  • কমপক্ষে ২ জন সন্তানের NID card এর ফটোকপি যেখানে পিতা-মাতার নাম শুদ্ধ আছে।
  • জাতীয় পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি
  • ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর সিটি কর্পোরেশন হতে নামের প্রত্যয়নপত্রের কপি।

NID কার্ডের পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে যা প্রয়োজন হবে

  • SSC বা HSC অথবা সমমানের সনদ
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • পিতা/মাতার জন্ম নিবন্ধ সনদ
  • চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে প্রতাষ্ঠানিক সনদপত্র
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ

যেভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করবেন

প্রথমে থানা, জেলা বা উপজেলা অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড ফরমটি সংগ্রহ করুন। তারপর সেটি সর্তকর্তার সাথে পূরণ করুন। এবং যাবতীয় ডকুমেন্ট ফরমটির সাথে পিন-আপ করে যুক্ত করে নিন। তারপর সেটি দায়ীত্বশীল ব্যক্তির নিকট জমা দিন। তারপর মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থাৎ বিকাশ বা রকেটের মাধ্যে সংশোধন ফি পরিশোধ করুন। তাহলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কার্যক্রম শুরু হবে।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন

প্রথমে যেকোন ব্রাউজার থেকে চলে আসুন এই ঠিকানায়। তারপর প্রথম পেইজ এ একাউন্ট রেজিস্টার অপশন দেখতে পাবেন।

রেজিষ্টার অপশনের নিচে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার বা ফর্ম নাম্বার দিন। সেই সাথে জন্ম তারিখ, সাল, মাস ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে নিম্মের ক্যাপসাটি দিয়ে সাবমিট করুন।

৩য় ধাপে আপনার NID কার্ডের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে বসিয়ে দিন। তারপর পরবর্তী ধাপে ক্লিক করুন।

 

৪র্থ ধাপে আপনাকে একটি ফোন নাম্বার দেখাবে সেটাতে একটি কোড পাঠিয়ে আপনার পরিচিত নিশ্চিত করুন।

যদি দেখানো ফোন নাম্বারটি আপনার কাছে না থাকে তাহলে ২য় অপশনে ফোন নাম্বার পরিবর্তনের অপশন পাবেন। সেখান থেকে পরিবর্তন করে কোর্ড যাচাই করে নিন।

এন আইডি কার্ড যাচাই (NID Wallet অ্যাপস দিয়ে) 

৫ম ধাপে আপনাকে NID wallet নামক একটি অ্যাপস গুগল প্লেস্টোর থেকে ইন্সটল করতে হবে। সেটি ইন্সটল করে নিন। NID wallet অ্যাপসটি আপনার ফেইস কে যাচাই করবে। আপনি অর্জিনাল ব্যক্তি কিনা। Apps টি ওপেন করে ফেইস স্কানে ক্লিক করে আপনার ঘাড়টা এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতে হবে। তাহলেই আপনার ফেইসটি সফলভাবে নিয়ে নিবে।

ফেইস দেওয়ার সাথে সাথে NID ও ফেইসের সাথে মিল চেক করা হবে। সঠিক ব্যাক্তি যদি ফেইস দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার সকল তথ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হবে। এবারে এড়িয়ে যান অপশনে ক্লিক করে এগিয়ে যান।

৬ষ্ঠ ধাপে আপনার প্রোফাইলে যেতে হবে। সেখানে গেলে আপনার পুরনো সকল তথ্য বাংলা ও ইংরেজিতে দেখানো হবে।

এখন আপনি যদি কোন তথ্য পরিবর্তন করতে চান তাহলে এডিট অপশনে ক্লিক করে বহাল অপশে ক্লিক করুন এবং পরিবর্তন করুন।

আপনি যেই তথ্যটি সংশোধন করতে চান তার ওপরের ছোট্ট টিক চিহ্নটি ক্লিক করে দিন। তারপর পরিবর্তন করুন। সঠিক তথ্য দিয়ে পরিবর্তন করার পর একদম ওপরে এসে পরবর্তী অপশে ক্লিক করুন।

৭ম ধাপঃ এখন আপনার তথ্য সংশোধনের আবেদনটি চুড়ান্ত করতে আপনাকে সংশোধনীয় ফি পরিশোধ করতে হবে। আপনি চাইলে বিকাশ বা রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এ সংশোধনীয় ফ্রি পরিশোধ করতে পারেন।

বিঃদ্রঃ আপনার যদি বিকাশ একাউন্ট না থাকে তাহলে অন্য কারো একাউন্ট থেকে অথবা বিকাশ এজেন্ট থেকে আপনার ফি পরিশোধ করতে পারবেন। সুধু মাত্র সাথে NID কার্ডটি নিয়ে যাবেন।

মনে রাখবেনঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত মনে করে থাকবেন। বয়স, নাম, সাল, রক্তের Group এসব পরিবর্তনের আবেদন ভিন্নতর। যা একদম ভুল ধারণা মূলত সবগুলো সমস্যার সমাধান এই একই সিস্টেম মেনে কাজ করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ভোটার হতে কি কি লাগবে?

যেভাবে সংশোধনীয় ফি পরিশোধ করবেনঃ 

প্রথমে বিকাশ অ্যাপ থেকে পে বিল অপশনে চলে আসুন। তারপর NID services ( সরকারি ফি) অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আবেদনের ধরণ নির্বাচন করুন।

এখন প্রথম অপশনটি সিলেক্ট করুন NID info correction এবং নিচে NID কার্ডের নাম্বার বসিয়ে দিন। নাম্বার দিয়ে পে  বিল করতে এগিয়ে যান অপশনটাতে ক্লিক করুন। এখন আপনার সামনে সংশোধনীয় ফি ২৩০ টাকা দেখাবে। আপনার বিকাশে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে (পরের ধাপে যেতে ট্যাপ করুন)  অপশনে ক্লিক করে আপনার বিকাশ পিন কোড দিলে আপনার একাউন্ট থেকে সফল ভাবে ফি পরিশোধ হয়ে যাবে।

৮ম ধাপেঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে আবারও পুনরায় ওয়েবসাইটে ফিরে আসুন। যদি কারো একাউন্ট লগ আউট হয়ে যায় তাহলে আপনার NID নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে লগিং করে নিন। এখন আপনার পেইজটাকে রিলোড করে নিলে আপনার একাউন্টে ২৩০ টাকা যুক্ত হয়েছে তা দেখতে পাবেন। এখন আবারও যেই তথ্যটি পরিবর্তন করেছেন সেটি দেখে নিন। তারপর টিক চিহ্ন তুলে ওপরের পরবর্তী অপশে ক্লিক করুন।

এরপর একটু নিচে থেকে আবেদনের ধরণ নির্বাচন করুন। Regular অথবা Smart card. তারপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। এখন আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে বলবে। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে PDF কপি বা ক্লিন ছবি তুলে সেই গুলো যুক্ত করুন।পোস্টের ওপরে বলে দেওয়া হয়েছে কোন আবেদনে কি কি ডকুমেন্ট যুক্ত করতে হবে সেটি ফলো করে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করুন ।

আরো জানুনঃ

এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম।

স্মার্ট কার্ড চেক করার ২টি সহজ পদ্ধতি জেনে নিন।

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *