ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও করণীয়।

শেয়ার করুন

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। সাধারণত, দীর্ঘসময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে ব্যাহত হয়। যা ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। নিম্নে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

সাধারণত, যেসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনি বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে নিম্নে তুলে ধরা হলো। লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

  • ঘনঘন প্রস্রাব হয়।
  • ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
  • দুর্বল লাগে।
  • ঘনঘন পিপাসা হয়।
  • রক্তে শর্করা কমে যায়।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
  • কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস পায়।
  • চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
  • চোখে কম দেখে।
  • শরীরে ক্ষত বা কাটা ছাড়া শুকাতে দেরি হয়।
  • রোগীর কিছুক্ষণ পরপর ক্ষুধা লাগে। অনেকেই ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না।
  • চামড়া সুষ্ক হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হয়।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হারালে রোগীর শ্বাসকষ্ট,বমি বমি ভাব,অজ্ঞান হওয়া ও কোমা হতে পারে হতে পারে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ জানার পর আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে বা ডায়াবেটিস প্রমাণিত হলে,ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কিছু করণীয় কাজ নিম্নে তুলে ধরা হলো। যেগুলো অবলম্বনে আপনি ডায়াবেটিস থেকে খুব দ্রুত নিস্তার পেতে পারেন।

হাঁটাহাঁটি করা: বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ কায়েক পরিশ্রম থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। ফলশ্রুতিতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই ডায়াবেটিসের মত রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা হাটার অভ্যাস করুন। এছাড়াও এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার অভ্যাস করুন।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা: ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে শরীরে ক্যান্সারের মত মরণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ধূমপান পরিহার করুন।

জীবনধারা পরিবর্তন করা: যাদের পরিবারে মা-বাবা বা অন্য সদস্যদের ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে জীবনধারা বদলাতে হবে। যেমন:

  • নিয়ম অনুসারে নিয়মিত খাবার খেতে হবে।
  • সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে।
  • রাত দশটার আগে ঘুমাতে যেতে হবে।
  • যানবাহনের ব্যবহার কম করতে হবে।
  • হাঁটাচলা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • মিষ্টি ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
  • ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত  খাবার কম খেতে হবে।
  • দীর্ঘ সময় বসে না থেকে নিয়মিত হাটাচলা করতে হবে।
  • দিনে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।

মিষ্টি পরিহার করা: ডক্টর এ.কে আজাদ খান বলেন স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও এ সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি খাওয়া, এছাড়াও হোয়াইট পাস্তা, ফিজি ড্রিংক, প্যাস্ট্রি, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত লবন ও চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন কিছু পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখা: সাধারণত, ডায়াবেটিস হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা ঠিক রাখতে হবে। ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে বা ডায়াবেটিসে শনাক্ত হলে নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।

উল্লেখিত, নিয়মগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আপনি নিজেকে ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখতে পারবেন। তবে যাদের ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে তারা একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।

ভরাপেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ জেনেছি। এবার জেনে নেব ভরাপেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল। সাধারণত ভরা পেটে বলতে খাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয়কে বোঝায়। অর্থাৎ খাবার দুই ঘন্টা পর আপনার রক্তে শর্করা সর্বোচ্চ ৭.৮ বা তার কম হলে এটি স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়। আবার শর্করার পরিমাণ ৭.৮ থেকে ১১.০০ হলে প্রি ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্ব সময় হিসেবে ধরা হয়। এই সময় ডায়াবেটিস যাতে বৃদ্ধি না পেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

আবার, ভরাপেটে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ যদি ১১.১০ বা তার চেয়ে বেশি হয় এবং ডায়াবেটিস এর লক্ষণ এর সাথে মিল থাকলে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে ধরে নিতে হবে। ডায়াবেটিস হলে অতিরিক্ত চিন্তা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট গ্রহণ ও জীবনধারা পরিবর্তন এর মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। স্বাস্থ্য বিষয় গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

আরো জানুনঃ

চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি? ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার উপায়।

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *