ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি? ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার উপায়।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ডেঙ্গু রোগ/ডেঙ্গু জ্বর । দেশে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ ডেঙ্গু জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে। যার থেকে নিস্তার পাচ্ছেনা কেউই। ডেঙ্গু রোগ একটি ভয়াবহ ব্যাধি যার ফলে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে অনেক লোক। কিন্তু কেন ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে? এর থেকে বাঁচার উপায় কি? ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
ডেঙ্গু রোগ কি? এর উৎপত্তিস্থল কোনটি?
ডেঙ্গু রোগ একটি প্রাচীন রোগ। ১৯৯২ খৃষ্টাব্দে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়। যার উল্লেখ্যে আছে চীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রে। ডি. এ. ব্লেইজিস-এর মতে ডেঙ্গু শব্দটি মূলত সোয়াহিলি ভাষার ‘ডিঙ্গা‘ শব্দ থেকে এসেছে যাকে স্প্যানিশ শব্দ ‘ডেঙ্গু’ বলা হয়। যার অর্থ ‘সতর্ক থাকা’। এটি একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। যা এডিস মশা নামক এক ধরনের মশার জীবাণু থেকে হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু রোগের কারণ কি?
এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়। এটি সাধারণত সকালে ও মাঝ রাতের পর বেশি কামড়ায়। ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এডিস মশার একটি কামড়েই আপনি ডেঙ্গুতে সংক্রামিত হতে পারেন। এডিস মশার কামড়ের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। মূলত স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়।
ডেঙ্গু রোগ এর লক্ষণ
অনেকে ডেঙ্গু রোগ এর সাথে সাধারণ জ্বরকে মিশিয়ে ফেলেন অর্থাৎ বুঝে উঠতে পারেন না যে তার সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু জ্বর। এই বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন। সাধারণত প্রত্যেক রোগের ভিন্ন ভিন্ন কিছু উপসর্গ থাকে। ডেঙ্গু ও তার ব্যতিক্রম নয়। কি করে বুঝবেন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে কিনা? জানতে খেয়াল করুন এই কয়েকটি বিষয়ে।
- প্রচন্ড জ্বর হওয়া (High fever 40°C/104°F)
- মাথা ব্যথা করা (Severe headache)
- চোখের পিছনে ব্যথা করা (Pain behind the eyes)
- বমি করা (Vomiting)
- পেশী ও গিঁটে ব্যথা হওয়া (Muscle and joint pains)
- গ্রন্থি ফোলা (Swollen glands)
- ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া (Rash)
উপসর্গ গুলো দেখা গেলে ভাববেন না আপনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যাপারটা তা নয়। তবে এসব উপসর্গ দেখা দিলে হেলাফেলা না করে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এসব উপসর্গ এড়িয়ে গেলে যদি সেটা ডেঙ্গু হয় তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করবে যেমন:
- রক্তপাত।
- অবিরাম বমি হওয়া।
- রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া।
- দ্রুত শ্বাস – প্রশ্বাস হওয়া।
- রক্তের প্লাজমা লিকেজ হওয়া।
- মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত হওয়া।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া।
- বমি বা মলে রক্ত বের হওয়া।
- ফ্যাকাশে এবং ঠান্ডা ত্বক দেখা দেওয়া।
- দুর্বল বোধ করা।
ডেঙ্গু কোন সাধারণ রোগ নয়। তাই প্রাথমিক উপসর্গ গুলো দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
যারা ডেঙ্গু রোগ এ আক্রান্ত তাদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় অর্থাৎ A গ্রুপ, B গ্রুপ এবং C গ্রুপ। যারা A গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত সাধারণত তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই যথেষ্ট হবে।
কিন্তু যারা B গ্রুপ তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি। তাদের ক্ষেত্রে যেই সমস্যা গুলো দেখা যায়: বমি, পেটে ব্যথা, স্থূলতা, শরীর ব্যথা, ডায়াবেটিস, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
সর্বশেষ যারা C গ্রুপ তাদের অব্যশই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আবশ্যক। তাদের ক্ষেত্রে যে সমস্যা গুলো পরিলক্ষিত হয় তাহলো: লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্কে সমস্যা। অবিরাম বমি, চোখ, নাক ও পায়খানার সাথে রক্ত পড়া ইত্যাদি।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ?
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত যেসব খাবার বেশি পরিমানে খেতে হবে তাহলো বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত বা ফলের জুস অথবা ওরস্যালাইন। এ সময় যতটা সম্ভব খাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কোন খাবারই বাদ দেওয়া লাগবে না। সব ধরণের খাবার খেতে পারবেন। ডেঙ্গু সমস্যা এড়াতে বেসিকভাবে প্যারাসিটামল বা ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে, তবে সর্বাবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডেঙ্গু রোগ হলে কি মাসিক হয় ?
ডেঙ্গু রোগ এ গুরুতর আক্রান্ত হলে রক্তে প্লাটিলেট (Platelets) পরিমান কমে যায়। যার ফলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা যেমন: নাক, দাঁতের মাড়ি অথবা চোখের কোনা থেকে রক্তক্ষরণ। পেটে রক্তক্ষরণের ফলে পায়খানার সময় কালো মল ত্যাগ করা। তবে নারীদের ক্ষেত্রে হঠাৎ পিরিয়ড বা মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়া এবং পিরিয়ডের সময় অধিক পরিমানে রক্তক্ষরণ হয়।
এডিস মশা চেনার উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে এডিস মশাকে খালি চোখেও খুব সহজে চেনা যায়। এদের দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। দেখতে অনেকটা বাঘের মতো। তাই এই ধরনের মশাকে টাইগারও বলা হয়। এরা সাধারণত ছোট থেকে মাজারি সাইজের হয়ে থাকে। জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এডিস মশার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এরা সকাল ও মাঝ রাতে মানুষদের বেশি কামড়ায়।
আরো জানুনঃ