পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও সঠিক সময়।
পানির অপর নাম জীবন জানলেও পানি পান করার সঠিক নিয়ম আমাদের জানা উচিত। মানব দেহের শতকরা প্রায় ৭০% পানি দিয়ে গঠিত। পানি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে, ত্বককে ভালো রাখে, শারীর গঠনে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এছাড়াও পানি খাদ্য হজমে সহায়তার পাশাপাশি শরীরের নানা উপকার সাধন করে। তাই প্রতিদিন নিয়ম মেনে বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যান্ত জরুরি। আজকের পোস্টে আমরা জানব পানি পান করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে এবং কোন বয়সের লোকদের দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত।
পানি পান করার সঠিক নিয়ম
পানি পান করার সঠিক নিয়ম থাকলেও আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা যতটুকু ইচ্ছে এবং যেভাবে ইচ্ছে পানি পান করেন। যেটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ একই পরিমান পানি আলাদা সময়ে বা আলাদা ভাবে পান করার জন্য শরীরে আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলে। এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে একবারে কতগ্লাস পানি পান করা যাবে বা কিভাবে পান করা যাবে?
পানি পান করার সঠিক নিয়ম হলো যেকোন এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে ধীরে ধীরে পান করা। পানির সাথে সাথে গিলে না পেলে মুখের মধ্যে কিছু সময় নাড়া চাড়া করে গিলেফেলা উচিত। এভাবে পানি পান করলে আমাদের মুখের মধ্যে থাকা উপকারী লালা পেটে গিয়ে এসিডিটি সমস্যাকে নিরাময় করে। যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এজন্য পানি পান করার সঠিক নিয়ম মানা উচিত।
অন্যদিকে দাড়িয়ে পানি পান করলে পানির শক্তি বেশি হওয়ার কারণে এটি আমাদের কিডনি ভালোভাবে ফিল্টারিং করতে দেয় না। আবার কেউ যদি মুখের ওপর থেকে পানি ঠেলে পান করেন তাহলে পানির সাথে সাথে মুখের মধ্যে ধুলা বালি বা অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস প্রবেশ করতে পারে। তাই এভাবেও পানি পান করা অনুচিত। আবার একবারে ১ থেকে দেড় গ্লাসের বেশি পানি পান পান করা উচিত নয়।
এছাড়াও অপরিষ্কার পাত্রে পান পান করা উচিত নয়। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন পানি পান করার সময় গ্লাসে নিঃশ্বাস ফেলেন যা আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কখন পানি পান করা উচিত ?
পানি পান করার সঠিক নিয়ম জেনে পানি পান করা উচিত। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন না বুঝে পানি পান করেন যা একদম উচিত নয়। কারণ আপনার পানি পানের অসচেতনতার কারণে আপনি নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।
খাবার খাওয়ার আগে অল্প পরিমানে পানি পান পান করে নেয়া উচিত। এতে করে মুখের রুচি বেড়ে যায় এবং খাবার হজমেও সাহায্য করে। কিন্তু খাবার খাওয়ার আগে খুব বেশি পানি পান করা উচিত নয়। এতে অল্প খাবারে পেট ভরে যায়। এছাড়ও খাবারের পূর্বে বেশি পানি পান করলে এটি আমাদের খাবার স্তরকে পাতলা করে দেয় ফলে পাচকতন্ত্রের হজমে সমস্যা দেখা দেয়। তাই পানি পান করার সঠিক নিয়ম মানা উচিত।
অন্যদিকে মাংস জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে পানি পান করা উচিত নয়। বরং ২০-৩০ মিনিট পরে পানি পান করা উচিত এতে করে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
রাতে শোয়ার পরে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওঠে পানি পান করে আবার শুতে যাওয়া একদম উচিত নয়। কারণ ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীর ঠিক মতো একটিভ থাকে না। যার ফলে পানি ফিল্টারিং হওয়ার আগেই কিডনিতে পৌঁছে যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
এছাড়াও খেলা ধুলার বিরতির সময় বা প্রচন্ড রোদ্র থেকে আসার পর পানি পান করা উচিত নয়। এতে করে বুকে ঠান্ডা লেগে যাওয়া বা জ্বর বা কাশি হতে পারে। তাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে তারপর পানি পান করা উচিত।
প্রথম বার পানি পান করার অন্তত পক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর পানি পান করা উচিত। কেননা ঘন ঘন পানি পান করলে তা আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং পনি ফিল্টারিং হওয়ার পূর্বের মূত্রনালীতে পৌঁছে যায়। যার ফলে বার বার ওয়াশ রুমে যাওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
পানি পান করা নিয়ে ভুল ধারণা
আমাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিরাই মনে করেন পানি পান করা এটা স্বাভাবিক বিষয়, এখানে নিয়ম কানুনের কি দরকার ? পানি যখন ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে, যতটা ইচ্ছে ততটা খাওয়া যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। যা সম্পূর্ণ ভুল।
কারণ, পানিকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও এটি কিন্তু অতটা সাধারণ নয়। পানি যেমনি একদিকে আমাদের শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখে, শরীরকে সুস্থ রাখে, শরীরের ওজন বৃদ্ধি বা কম করতে সাহায্য করে। ঠিক একইভাবে ভুল পানি পান পদ্ধতি আপনার দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কারণ হতে পারে।
যেমনঃ- বার বার অসুখ হওয়া, খাদ্য হজমে সমস্যা, পেটে গ্যাস হওয়া, কিডনি দুর্বলতা, অস্বস্তি লাগা, স্কিন এলার্জি, দাদ, চুলকানি, একজিমা, ব্রণ ওঠা, পাকস্থলী সমস্যা, ওজন হ্রাস পাওয়া সহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়, সঠিক নিয়ম মেনে সুশৃঙ্খলভাবে পানি পান করা উচিত।
অতিরিক্ত পানি পান করলে কি হয়?
কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। সেটা পানি কিংবা অন্যকিছু। অতিরিক্ত মাত্রায় পানি পানে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায় ফলে শরীর দুর্বল লাগা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, মাথা ব্যথা বা ক্লান্তি লাগার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি পান করার সঠিক নিয়ম মানা উচিত।
পানি শূণ্যতা কেন হয়?
আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম পারিমাণ পানি পান করেন তাহলে শরীরে পনিশূণ্যতা দেখা দিতে পারে। যার ফলে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা যেমনঃ
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা
- হজমশক্তি হ্রাস পাওয়া
- ত্বক ডেমেজ হয়ে যাওয়া
- মাথা ঘুরানো ও
- দুর্বলতা লাগা ইত্যাদি
আপনার দেহে যদি এমন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি পানিশূণ্যতায় ভুগছেন। তাই পানি শূণ্যতা এড়াতে পানি পান করার সঠিক নিয়ম মানতে হবে।
করুন। এছাড়াও লেবুর রস ও ডাবের পানি পান করতে পারেন।
দৈনিক কত গ্লাস পানি পান করা উচিত?
শরীরকে সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করা উচিত। আপনি দৈনিক কত লিটার পানি পান করবেন তা নির্ভর করবে আপনার ওজন, বয়স, উচ্চতা ও পরিবেশের ওপর। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ২.৫ থেকে ৩ লিটার পরিমান পানি পান করা উচিত যা একটি এভারেজ গ্লাসের ৮-১২ গ্লাস সমপরিমান।
আর গরমের দিনে শরীর থেকে ঘাম নির্গমনের করাণে পানি পানের পরিমান কিছুটা বাড়াতে হবে। তবে যারা নিয়মিত এক্সারসাইজ করেন তাদের আরোও বেশি পরিমানে পানি পান করা উচিত। কারণ ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে একটু বেশি পরিমানে পানি নির্গত বা বেরিয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ
মুখের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়।
এলার্জি,চুলকানি,ঘামাচি ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্তির উপায়।
তথ্য সংগ্রহঃ
ডাঃ আরশাদ উল আজিম।
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নেফ্রোলজি), ফেলো-আইএসপিডি (হংকং)। সহকারী অধ্যাপক (নেফ্রোলজি),শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, খুলনা।