পোড়া খাবার খেলে কি হয় জেনে নিন।

শেয়ার করুন

ওভেন কিংবা চুলায় রান্না করার সময় অসচেতনভাবে অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন খাবার পুড়ে যায়। অনেকে হয়ত পোড়া অংশ বাদ দিয়ে বাকিটুকু খেয়ে নেন।  আবার অনেকে সম্পূর্ণ খাবার খেয়ে নেন। কিন্তু পোড়া খাবার খাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত বা পোড়া খাবারে কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা? গবেষণায় কি বলে? চলুন জেনে নেই আজকের পোস্টে।

পোড়া খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব স্টকমের বিজ্ঞাণীরা এক গবেষণায় দেখেছেন যে পাউরুটির পোড়া অংশ না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ হিসেবে তারা বলেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার যদি ১২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাজা বা রান্না করা হয় তাহলে তাতে এক ধরনের অ্যাক্রিলামাইড (Acrylamide) তৈরি হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সাধারণত, পাউরুটি, আলু, বেগুন, বিস্কুট, ভুট্টা, কপি ইত্যাদি খাবার গুলো পুড়ে যাওয়ার কারণে এইরূপ উপাদান তৈরি হয়। এগুলোর চিনির উপাদান এমাইনো এসিড অ্যাসপার এজিং এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে যা মেইলড প্রক্রিয়া নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা খাবারকে বাদামি করে তোলে এবং নতুন একটি স্বাদ তৈরি করে।

গবেষকরা বলেন অ্যাক্রিলামাইড মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে শিশুরা এর ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। তবে মানুষের দেহে অ্যাক্রিলামাইড কতটা ক্ষতিকর এখন পর্যন্ত তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

যেসব উপাদানের কারণে মানব দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় সেগুলোকে বলা হয় কার্সিনোজেন। এখন কার্সিনোজেন আসলে অ্যাক্রিলামাইড কিনা এবং সেটার প্রভাব কতটুকু সেটি দেখার বিষয়।

নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রমণ করে

বিজ্ঞানীরা বলেন অ্যাক্রিলামাইড মানব দেহের জন্য নিউরোটক্সিক হিসেবে কাজ করে। যা নার্ভাস সিস্টেমে বিরুপ প্রভাব ফেলে। যার সব কারণ এখনও গবেষণায় পাওয়া যায়নি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাক্রিলামাইড স্নায়ু কোষের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনকে আক্রমণ করে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

গবেষণায় আরোও দেখা গেছে যে Acrylamide এর ক্ষতি কারক প্রভাব ক্রমবর্ধিষ্ণু। অর্থাৎ কেউ যদি অল্প পরিমাণে অ্যাক্রিলামাইড দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করেন তবে সেটি তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। বিজ্ঞানীরা পশুদের ওপর গবেষণা করে জানতে পারেন যে অ্যাক্রিলামাইডের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব রয়েছে।

সুইডেনের ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ফেদরিকা লাগুজি বলেন এটি ডিমেনশিয়ার মতো নিউরো- ডিজেনেরেটিভ ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং শিশুদের নিউরো- ডেভেলপমেন্ট অসুখের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও তিনি আরোও বলেন গর্ভবতী নারীদের উচ্চ পরিমানে অ্যাক্রিলামাইড গ্রহনের কারণে  নবজাতক শিশুদের কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া এবং মাথার পরিধি ও দৈর্ঘ্য কম থাকার মধ্যে একটি যোগ সূত্র রয়েছে।

তবে মানব দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে অ্যাক্রিলামাইড ভূমিকা কতটুকু এবং কিভাবে অ্যাক্রিলামাইড মানুষের দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে এর সম্ভাব প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনও অবগত নয় বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণত অ্যাক্রিলামাইড গাছপালায় পাওয়া যায় না। এটি খাবার পুড়ে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়। সুতরাং রান্না করার সময় কম আঁচে রান্না করা জরুরি। এছাড়াও কিছু খাবার রান্নার আগে কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমনঃ আলু রান্নার আগে ১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে অ্যাক্রিলামাইড তৈরির সম্ভাবণা কমে যায় প্রায় ৯০ শতাংশ।

অ্যাক্রিলামাইড আসলে মানব দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা জানার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন  বিজ্ঞানীরা।

আরো জানুনঃ

মোটা হওয়ার উপায় জেনে নিন।

মুখের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

এক নজরে আজকের পোস্ট

  • অ্যাক্রিলামাইড কি? কিভাবে ক্ষতি করে ?
  • পোড়া খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্য ঝুকি।
  • পোড়া খাবারে ক্যান্সারের ঝুকি।
  • পুড়ে যাওয়া খাবার খাওয়া উচিত কিনা?
  • পোড়া খাবার কি আসলেই ক্যান্সারের কারণ?
  • ডাঃ ফেদরিকা লাগুজি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *