প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা দেখে নিন।

শেয়ার করুন

প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ প্রোটিন মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। সুস্থ দেহের জন্য চাই পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টি। যা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, দই ইত্যাদি খাবারে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন অর্থের অভাবে এসব খাবার খেতে পারছেন না। তাই দিন দিন পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন এবং জড়িয়ে পড়ছেন নানা শারীরিক জটিলতায়।

প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে মাংসের বিকল্প ৮ ধরনের খাবারেরর তালিকা যেগুলোতে মাংসের মতই আমিষ পাওয়া যাবে।

আমিষ বা প্রোটিন

মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান প্রোটিন বা আমিষ। যা নতুন কোষ তৈরি, হাড়, পেশি ও ত্বকের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়াও পুষ্টিবিদের মতে প্রোটিনের অভাবে প্রোটিন এনার্জি ম্যালিট্রেশন PEM হতে পারে। একই সাথে ভিটামিন A, আয়রন ও আয়ডিনের অভাব জনিত নানা রোগ ও দেখা দিতে পারে। তাছাড়ও শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি, নবজাতক সন্তানের শারীরিক গঠন ও দুধ পান করানো মায়েদের দুধের পরিমান কমে যেতে পারে। ত্বকের সমস্যা, চুল পড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা 

ব্যক্তির উচ্চতা, বয়স, ওজন ও স্বাস্থ্য ভেদে প্রোটিনের পরিমানও ভিন্ন হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওজনের সমসংখ্যক গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। সহজ ভাবে বলতে গেলে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওজন যদি 60 কেজি হয় তাহলে তাকে প্রতিদিন 60 গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

তবে শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণে আমিষ প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে রাখা  জরুরি। যেমন কোন শিশুর ওজন যদি ২৫ কেজি হয় তাকে দৈনিক ৩০ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েদের বা শিশুদের দুধ পান করান এমন মায়েদের অথবা কিডনি জটিলতা নেই এমন প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তার প্রোটিনের পরিমান তার ওজনের দেড় গুণ বেশি গ্রাম গ্রহণ করা উচিত।

অর্থাৎ কোন গর্ভবতী মায়ের মোট ওজন যদি ৬০ কেজি হয় তাহলে তাকে দৈনিক ৯০ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হবে। আর যদি ব্যক্তির ওজন অতিরিক্ত বেশি হয় তাহলে তাকে কম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে এবং ওজন কম হলে বেশি প্রোটিন গ্রাহণ করতে হবে। মোট কথা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আমিষ রাখা জরুরি।

প্রোটিন জাতীয় খাবার

আমাদের মধ্যে অনেকে আমিষ বলতে মাছ, মাংস, ডিম, দুধকে বুঝেন। নিঃসন্দেহে এগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস। কিন্তু এসব খাবার ছাড়াও কিছু শাক সবজি ও ফলমূল ও বীজে প্রচুর পরিমানে আমিষ বিদ্যমান রয়েছে। যা জানা সবার জন্য জরুরি। আসুন প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা থেকে জেনে নেই এমন ৮টি খাবার সম্পর্কে।

প্রাণীজ প্রোটিন 

সাধারণ কথায় প্রাণী থেকে যে প্রোটিন পেয়ে থাকি তাই প্রাণীজ প্রোটিন। যেমনঃ

মাছ

বাজারে বেশি দামের মাছ বা ব্রয়লার মুরগী না খেতে পারলেও চেষ্টা করুন তুলনা মূলক কম দামের ছোট ছোট মাছ খেয়ে পুষ্টির চাহিদে মেটাতে। যেমন: তেলাপিয়া, সরপুঁটি, শিং, পাঙ্গাস ও মাগুর মাছ খেতে পারেন। কেননা মানুষের দেহের জন্য প্রনীজ প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

পুষ্টিবিদদের মতে আমিষের চাহিদা মেটাতে দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবারের ভূমিকা অপরীসিম। কেননা দুধ একটি আদর্শ  খাবার যা পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দারুণ কার্যকরী। তাই প্রতি দিনের খাদ্য তালিকায় দুধ বা দুধের তৈরি খাবার যেমন: রসগোল্লা, দই, মিষ্টি, সানা বা পনির খেতে পারেন।

গৃহপালিত হাঁস মুরগী

মার্কেটে গরুর, ছাগল বা ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়ে গেলেও বাসা বাড়িতে পালিত দেশি হাঁস, মুরগী খেতে পারেন। যদি আপনার বাড়িতে হাঁস, মুরগী পোষার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে ২/৪ টি হাঁস বা মুরগী পালন করতে পারেন। যা অসময়ে পুষ্টির যোগান দিবে।

উদ্ভিজ্জ প্রোটিনঃ

এক কথায় উদ্ভিদ থেকে যে প্রোটিন পাওয়া যায় তাই হল উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। যেমনঃ

ডাল

হাতের নাগালে খুব সহজে বিভিন্ন ধরণের ডাল পাওয়া যায়। প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে এই ডাল হতে পারে প্রোটিনের ভালো উৎস। পুষ্টিবিদের মতে যদি মাংসের সাথে আলু ও কয়েক প্রকারের ডাল মিশিয়ে খাওয়া যায় তবে সেটা মাংসের কাছাকাছি আমিষ সরবারাহ করবে। ডালের মধ্য থেকে আপনি মসুরের ডাল, ছোলার ডাল, মুগ ডাল, ডাবলি, মটর ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও প্রতিদিন ১০০ গ্রাম বা আধাকাপ সিদ্ধ ডাল খেলে ৭-৯ গ্রাম আমিষ পাওয়া যাবে।

সবজি

প্রতিদিনের প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে সবুজ শাক সবজি রাখতে পারেন। কারণ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিতে বেশ ভালো পরিমানে আমিষ পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম অ্যাসপারাগাস, ব্রোকলি ও পালং শাকে ৩.৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও ১০০ গ্রাম ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে ২ থেকে ৩ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়।

কাঁঠাল

কাঁঠাল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে কাঁঠাল রাখতে পারেন। যদিও সব ধরণের ফলমূলে কম বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে বড় আকারের এক কোয়া কাঠালে প্রায় ২-৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন কমবেশি কাঁঠাল খেতে পারেন।

মাশরুম 

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে প্রোটিনের ভালো উৎস হলো মাশরুম। দেশে অনেক ধরনের মাশরুমের জাত রয়েছে তবে এদের মধ্যে প্রায় ১০ রকমের মাশরুম খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সাপ্তাহে ৩/৪ বার মাশরুম খেলে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। তাই মাংস বিহীন প্রোটিন ডায়েট করতে চাইলে মাশরুম খেতে পারেন। ১০০ গ্রাম মাশরুমে ৩ গ্রামের বেশি পরিমান আমিষ সহ অন্যান্য পুষ্টি পাওয়া যায়।

ছাতু

ছাতুতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায়। যা মাংসপেশি সুগঠিত করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস ছাতুর সেরেলা খেতে পারেন।

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাদ্য 

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে বীজ জাতীয় খাদ্য রাখতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে ১০০ গ্রাম বা ১ কাপ বাদাম বীজে ১৫ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংসের বিকল্প বাদাম বা বীজ খাওয়া যেতে পারে। যেমন: বিভিন্ন ধরণের বাদাম, চিনাবাদাম, কাটবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা, আকরোস এছাড়াও ভিবিন্ন ধরণের বীজ যেমন: শিমের বীজ, কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখী বীজ, কাঁঠালের বীজ, তিসি বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায়।

সয়া

১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৮.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা প্রায় মাংসের সমপরিমান। এছাড়াও  সয়াবিনে  প্রোটিন তৈরিতে সব ধরণের উপকরণ রয়েছে যা দেহে অ্যামাইনো এসিড তৈরিতে সাহায্য করে। তাই প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সয়াবিনকে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা তে রাখতে পারেন।

আরো জানতে পড়ুনঃ 

মুখের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়।

এলার্জি,চুলকানি,ঘামাচি ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্তির উপায় জানুন।

তথ্য সংগ্রহঃ

জান্নাতুল নাঈম নাঈমা (খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ)

বিএসসি-খাদ্যওপুষ্টি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), এমপিএইচ (ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া), স্পেশাল ট্রেইনিং অন ফুড এন্ড হেলথ (USA),

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *