মোটা হওয়ার উপায় জেনে নিন।
মোটা হওয়ার উপায়ঃ সুস্থ স্বাস্থ্যের অধিকারী আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই হতে চায়। কিন্তু দৈনন্দিন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে সেই সুযোগটা হাত ছাড়া হয়ে যায় অনেকের। একেবারে চিকন স্বাস্থ্য যেমন কারো কাম্য নয়, ঠিক একইভাবে অত্যধিক মোটা দেহ কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রায় ৬০% মানুষ স্থুলতার সমস্যায় ভোগেন।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া, বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের মানুষ শারীরিক ভাবে চিকন হওয়া নিয়ে চিন্তিত। তবে আপনি মোটা হবেন নাকি চিকন সেটা নির্ভর করবে আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপর। তাই সুস্থ স্বাস্থ পেতে প্রথমে নিজের খাবার-দাবারের ওপরে নজর দিন।
ওজন কম হওয়ার কারণ
মোটা হওয়ার উপায় গুলো জানার আগে আমাদের জানা উচিত আমি বা আপনি কেন মোটা হচ্ছি না বা কি কারণে মোটা হতে পারছিনা। যদি প্রশ্ন গুলোর উত্তর মিলে তাহলে মোটা হওয়াও আপনার জন্য সহজ হবে। ওজন কম হওয়ার অনেক গুলো কারণ আছে যার মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ হচ্ছে:-
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
- মানসিক চাপ।
- জেনেটিক সমস্যা।
- ক্যান্সার।
- ডায়রিয়া।
- ডায়াবেটিস ।
- যক্ষ্মা।
- কিডনি সমস্যা।
- ফুসফুসে সমস্যা ।
- হাইপারথাইরয়েডিজম ।
- ড্রাগ নেওয়া
- আমাশয় রোগ ইত্যাদি।
মোটা হওয়ার উপায়
মোটা হওয়ার উপায় জানতে/শারীরিকভাবে মোটা হতে চাইলে আপনাকে আপনার খাদ্যাভ্যাসসহ বেশ কিছু জায়গায় নজর দিতে হবে। যেগুলো নিম্মে তুলে ধরা হলোঃ
নিয়মিত খাবার গ্রহণ
আপনি যদি মোটা হতে চান তাহলে আপনাকে অভুক্ত থাকা যাবে না। অর্থাৎ যখনি ক্ষিদে লাগবে কিছুনা কিছু খেতে হবে। তবে অব্যশই মনে রাখবেন আপনার খাবার গুলো যেন স্বাস্থ্যকর ও পৃষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়। সকাল, দুপুর, রাত ছাড়াও দৈনিক অনেকবার খাদ্য গ্রহণেরর অভ্যাস গড়তে হবে। অর্থাৎ আপনি যত বেশি খাবেন ঠিক তত দ্রুত মোটা হবেন। এ সময় আপনি ডিম, দুধ, কলা, দই, মিষ্টি, মলাই, ছানা ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।
ব্যায়াম
আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করা হয়। ওজন বাড়াতে গেলে ব্যায়াম করা যাবে না। কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা ওজন কমানোর জন্য যেমনি নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে ঠিক মোটা হওয়ার উপায় এ ওজন বাড়ানোর জন্যও নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে। যেগুলো আপরার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
এছাড়াও আপনি যদি ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেন তাহলে আপনার ওজন বাড়বে ঠিকই কিন্তু সেটা সুস্থ হবে না। তাই ওজন বৃদ্ধিতে অর্থাৎ মোটা হওয়ার উপায় তে ব্যয়াম করা জরুরি। যে ব্যায়াম গুলো আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক সেগুলো হলো:
- ডাম্বল শোল্ডার
- পুশ আপ
- যোগাসন
- বেঞ্চ প্রেস
- জগিং ইত্যাদি।
আপনার পক্ষে যদি প্রতিদিন ব্যায়াম করা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত সপ্তাহে ৩ দিন সকাল ও বিকাল এই ব্যায়াম গুলো করা যেতে পারে।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
মোটা হওয়ার উপায় জানতে অর্থাৎ আপনি যদি মোটা হতে চান তাহলে খাদ্য- তালিকায় কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার রাখুন। এটি আপনিকে মোটা করতে অনেকেটা সাহয্য করবে ভাত ও রুটি কার্বোহাইড্রেট এর ভালো উৎস। তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ভাত, রুটি বা গমের তৈরি খাদ্য রাখতে পারেন। তবে সুধু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলেই যে আপনি মোটা হয়ে যাবেন ব্যপারটা তা নয়। আপনাকে অন্যান্য পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে।
পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ
ওজন বৃদ্ধিতে ক্যালোরির গুরুত্ব অপরিসীম। যারা স্থুলতার সমস্যা ভোগেন তাদের ক্যালোরি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু অন্যদিকে যারা মোটা হতে চান তাদেরকে ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। দ্রুততম সময়ে ওজনে বৃদ্ধি করতে চাইলে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারেন। যেগুলোর বেশিরভাগে আপনি চা, কপি, হট চকলেট ও কোল্ড ড্রিংকসে পাবেন।
প্রোটিন গ্রহণ
শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে প্রোটিন খুব বেশি কার্যকরী একটি উপাদান, ক্যালোরি যুক্ত খাবারের পাশাপাশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি পরিমানে খেতে পারেন। এটিও ওজন বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।
বাদাম, কিসমিস ও খেজুর
মোটা হওয়ার উপায় ফলপ্রসু করতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ড্রাই Fruits জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেমন বাদাম, কিসমিস, খেজুর, আমন্ড, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি। কেননা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাই Fruits এ রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি যা আপনার দেহের স্থুলতার বৃদ্ধিতে খুব বেশি ভুমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ড্রাই Fruits রাখার চেষ্টা করুন।
পরিমিত ঘুম
সুস্থ স্বাস্থ্য পেতে আমাদের প্রত্যেককে পর্যাপ্ত গভীর ঘুমের চেষ্টা করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন কমপক্ষে 6 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
চিন্তা মুক্ত থাকা
সুস্থ দেহ সুন্দর মন প্রবাদটি আমরা সবাই জানি। তাই মোটা হওয়ার উপায় তে নিজেকে সুস্থ রাখতে বা ওজন বৃদ্ধি করতে যতটা সম্ভব চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
চকলেট ও চিজ
সাধারণত বাহিরের খাবার খাওয়া নিষেধ করা হয়। কিন্তু নিজেকে মোটা রাখতে প্রতিদিন আইসক্রিম, চকলেট, কেক, চিজ, বার্গার, পেস্ট্রি অর্থাৎ ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন। কেননা এটি আপনাকে মোটা রাখতে খুবই কার্যকরী একটি উপায়। তবে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই যেকোন খাবার পরিমিত খাওয়া উচিত।
পানি
নিজেকে সুস্থ রাখতে বা মোটা হতে চাইলে প্রতিদিন পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করার জরুরি। তাই দৈনিক কম পক্ষে ৬-৮ লিটার পানি পান করুন।
ফলমূল ও শাক-সবজি
মোটা হতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে পারেন। যা আপনার শরীরে পুষ্টির যোগান দেবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
সুষম খাবার গ্রহণ
নিজেকে মোটা রাখতে অনেকে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি খান। এতে করে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মোটা হতে সুধু মাত্র ২/১ টি পুষ্টিতে নয় বরং সব ধরণের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যেসব খাবারে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, স্নেহ রয়েছে সেসব খাবার বেশি খেতে হবে। তাহলে আপনি মোটা হওয়ার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যেরও অধিকারী হতে পারবেন।
যেসব ভুল করা যাবে না
মোটা হতে গিয়ে কোন ধরনের ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবেনা। অনেকে মোটা হতে গিয়ে বাহিরের তেলে ভাজাপোড়া খাবার পিজা, কেক, বার্গার, প্যাস্ট্রি এসব ধরণের খাবার বেশি খেয়ে থাকেন যা মোটেও উচিত নয়। মনে রাখবেন জাঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজত খাবার আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
মনবল ধরে রাখুন
অনেক সময় আপনার আশপাশের লোকেরা আপনাকে শুঁটকি বলে ক্ষেপাবে, হাসি ঠাট্টা করবে তাদের কথায় কান দিবেন না। নিজের মনবল ও মোটা হওয়ার উপায় গুলো ধরে রাখুন এবং মনে মনে বলুন সৃষ্টিকর্তা যাই করেন ভালোর জন্যই করেন। যারা তার সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করছে একদিন তাদেরকে তার জন্য জবাবদিহিতা করা হবে।
আরো জানতে পড়ুনঃ
প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা দেখে নিন।
মুখের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া টিপস।
তথ্য সংগ্রহঃ
ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন
এমবিবিএস, এএফসিপিএস
ইউনাইটেড হাসপাতালে
প্লট -১৫, রোড – ৭১, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।