হজমের সমস্যা দূর করার উপায় জেনে নিন সহজে।
হজমের সমস্যা দূর করতে কে না চায়? হজমশক্তি মানব দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। আপনার দেহে যদি হজমশক্তির ঘাটতি থাকে তাহলে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা যেমন শারীরিক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া,স্থুলতা, এসিডিটি, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি। তাই মানব দেহকে সুস্থ্য রাখতে হজমশক্তি বৃদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, হ্যাংলা পাতলা বা রোগাটে। তারা প্রায় সময় বিশেষজ্ঞদের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত হয় এবং বলে আমি এত্ত বেশি পরিমানে খাচ্ছি তবুও মোটা বা স্মার্ট হচ্ছি না কেন? শারীরিকভাবে দুর্বল কেন? ইত্যাদি।
আপনিও যদি এমন সমস্যায় ভুগেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। আর দেহে পুষ্টি না যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হজমশক্তির দুর্বলতা। হজমের সমস্যা দূর অর্থাৎ বেশি পরিমাণ খাওয়া সত্ত্বেও আপনার হজমশক্তি খারাপ হওয়ায় সে খাবার থেকে আপনার দেহ সঠিক পুষ্টি শোষন করতে পারছে না।
হজমের সমস্যা দূর করার উপায়
হজমের সমস্যা দূর করার অনেক গুলো উপায় রয়েছে। ব্যক্তিভেদে সেটা ভিন্ন হতে পারে। তবে বিশেষ করে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও শরীরিক ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করলে হজমশক্তি সবল রাখা যায়। এছাড়াও হজমশক্তি বৃদ্ধির/ হজমের সমস্যা দূর করতে আরোও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম কিছু উপায় নিম্নে বর্ণনা করা হল:
লেবু খাওয়া
লেবুতে রয়েছে মিটামিন সি যা হজমশক্তি বৃদ্ধি ও হজমে সহয়তা করে। তাই খাবারের সাথে লেবু অথবা খাবারের পর লেবুপানি খেতে পারেন। তবে বিশেষ করে যখন মাংস জাতীয় খাবার যেমন: গরু, খাসি বা হাঁসের মাংস খাবেন তখন সাথে অব্যশই লেবু রাখার চেষ্টা করুন।
খাবার চিবিয়ে খাওয়া
হজমের সমস্যা দূর করতে খাবারকে পর্যাপ্ত চিবিয়ে খেতে হবে। কারণ অর্ধেক চিবানো খাবার হজম করতে আমাদের শরীরের অনেকটা শক্তি ও সময় ব্যয় হয়। যার থেকে এসিডিটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ঘুমাতে যাওয়ার কম পক্ষে ১/২ ঘন্টা আগে খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
খাবার তালিকায় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার রাখতে পারেন। কেননা ক্যালসিয়াম আমাদের খাদ্য হজমে অনেক ভূমিকা পালন করে। গরু, ছাগল বা মহিষের দুধ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস।
দই/ দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া
অনেকে ল্যাকটোজেন অসহিষ্ণুতার কারণে দুধ খেতে পারেন না। তারা দুধের বিকল্প হিসেবে দই খেতে পারেন। দই এর মধ্যে উপকারি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা দেহের ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও ভালো ভূমিকা রাখে।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দেহের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন দুই কাপ গ্রিন টি বা পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। যা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এর ভালো উৎস।
পরিমিত পানি পান করা
হজমের সমস্যা দূর করে দেহের শক্তি সঞ্চালনে অথবা শরীরকে সুস্থ রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। পানি ছাড়া কোন খাবার ভালোভাবে হজম হতে পারে না। তাই প্রতিদিন পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করা অত্যান্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির কমপক্ষে প্রতিদিন ৩/৪ লিটার পানি পান করা উচিত।
ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়া
ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন: বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি ও ফলমূল রাখতে পারেন। এছাড়াও যেসব খাবারে প্রাকৃতিক ভাবে পানি রয়েছে যেমন: আম, জাম, আনারস, তরমুজ, টমেটো, শসা ইত্যাদি বেশি পরিমানে খেতে পারেন।
কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা
প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন সকাল ও বিকালে ৩০ মিনিট ধরে হাঁটা-চলা, দৌড়-ঝাপ, সাইকেলিং, যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন ইত্যাদি করা যেতে পারে। এটিও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখে।
পর্যাপ্ত সময় ঘুমপড়া
শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত গভীর ঘুম খুবই প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন কম পক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। রাতে তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়া ও সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস করতে হবে। এটি হজমপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে।
রঙিন ফল খাওয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পর রঙিন ফলমূল খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
দরুচিনি খাওয়া
এতে রয়েছে অ্যান্টাসিড যা গ্যাস্ট্রিক ও বদহজম রোগীদের জন্য একটি ভালো খাদ্য। একগ্লাস পানির সঙ্গে হাফ চা চামচ দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে ২/৩ মিনিট সিদ্ধ করে সেটি দিনে ২/৩ বার পান করতে পারেন।
পুদিনা পাতার রস খাওয়া
হজমের সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা যেকোন ধরণের পেটের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি অ্যাসিডিটি ও বদহজম দূর করতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন ১/২ বার পুদিনা পাতার রস বা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
প্রথমে কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে সেগুলোকে ধুঁয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর ১ কাপ পানিতে পাতা গুলোকে কয়েক মিনিট ফুঁটিয়ে একটি গ্লাসে নিয়ে নিন। তারপর এই রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতেও অনেক বেশি উপকার পাবেন।
আপেল খাওয়া
হজমশক্তি বৃদ্ধি বা বদহজম দূর করতে আপেল খুবই কার্যকরী একটি ফল। একটি আপেলকে কেটে ১ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে খেতে পারেন। এটি পেটের গ্যাস দূর করার পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে।
কাঁচা হলুদ এর রস খাওয়া
যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেতে পারেন। আপনি চাইলে এটি চিবিয়ে অথবা শিল পাটায় বেটে রস খেতে পারেন।
আদার রস খাওয়া
হজমের সমস্যা দূর করতে ও গ্যাস্ট্রিকের জন্য আদা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আদা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান ও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। প্রতিদিন খাবারের পর এক ইঞ্চি পরিমান আদাকে লবন দিয়ে চিবিয়ে অথবা চায়ের সঙ্গে খেতে পারেন। সম্ভব হলে আদা খাওয়ার পর সামান্য কুসুম গরম পানি খেতে পারেন এতে করে অনেক উপকার পাবেন।
পেঁপে পাতা রস নিয়ম মেনে খাওয়া
যারা বদহজম সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পেঁপে পাতার রস খেতে পারেন। এতেও অনেকটা উপকার পাবেন। একগ্লাস পানির সঙ্গে পরিমান মতো পেঁপে পাতা নিয়ে সেটাকে সিদ্ধ করে পানি খেতে পারেন। অনেকটা উপকার পাবেন।
কলা খাওয়া
অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও কোষ্ঠ- কাঠিন্য দূর করতে কলা খুবই কার্যকরী একটি ফল। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও বেশ ভূমিকা রাখে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া
বাহিরের খাবার বা অতিরিক্ত তেলে ভাজাপোড়া বা মসলা জাতীয় খাবার যেমন: কেক, বিস্কুট, বার্গার, পুরি, চপ, পরোটা ইত্যাদি কম/না খাওয়া ভাল। মদ, বিড়ি বা সিগারেট পরিহার করা খুবই জরুরী।
শেষ কথাঃ
হজমের সমস্যা দূর করার জন্য উপরে উল্লেখিত উপায়ের মধ্যে যেটা আপনার শরীরে সহনীয় সেটা করতে পারেন। তাছাড়া কায়িক পরিশ্রমের বিকল্প কোন কিছু নেই হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য। তাই নিয়ম মেনে কায়িক শ্রম দিন, সুস্থ্য থাকুন প্রয়োজনে একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
আরো তথ্য জানুনঃ
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি? ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার উপায়।