ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ফর্ম পূরণ করার নিয়ম
ইউকে ওয়ার্ক পারমিট হলো যুক্তরাজ্যের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি অনুমতিপত্র। এই পারমিট থাকলে আপনি যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক না হন, তাহলে যুক্তরাজ্যে কাজ করার জন্য আপনার ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হবে।
এই ব্লগপোস্টে আমি আপনাকে জানাবো,ওয়ার্ক পারমিটের গুরুত্ব,ফর্ম পূরণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার সহজ উপায় এবং ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ফর্ম পূরণ করার নিয়ম।
ওয়ার্ক পারমিটের গুরুত্ব
- ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া যুক্তরাজ্যে কাজ করা অবৈধ।
- কিছু ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে আপনি স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন।
- যুক্তরাজ্যে কাজের মাধ্যমে আপনি উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ পেতে পারেন।
ইউকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ফর্ম পূরণের আগে আপনার কিছু কাগজপত্র হাতের কাছে রাখতে হবে। এতে ফর্মটি পূরণ করা সহজ হবে। নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
- কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
- আপনার কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র (যদি থাকে)।
- ইউকের কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাবপত্র।
- আপনার নিয়োগকর্তার স্পন্সরশিপ সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণপত্র।
- IELTS বা অন্য কোনো ইংরেজি ভাষার পরীক্ষার স্কোর।
ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ফর্ম পূরণ করার নিয়ম
ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ফর্ম পূরণ করার নিয়ম ভালোভাবে জেনে নিন, কোন সেকশনে কী তথ্য দিতে হবে। তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে ফর্মটি পূরণ করুন। অধিকাংশ ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
প্রথমে ইউকে ভিসার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। https://www.gov.uk
ওয়ার্ক পারমিটের জন্য সঠিক ফর্মটি খুঁজে বের করুন। সাধারণত, এটি “Tier 2 Visa” বা “Skilled Worker Visa” নামে পরিচিত।
ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনার ইমেল আইডি এবং অন্যান্য তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করুন।
ফর্মটি প্রতিটি ধাপ মনোযোগ দিয়ে পূরণ করুন।
- আপনার নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, এবং জাতীয়তা সঠিকভাবে লিখুন।
- পাসপোর্ট নম্বর এবং ইস্যু করার তারিখ উল্লেখ করুন।
- আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা দিন।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ যেমন ডিগ্রি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, এবং পাসের বছর উল্লেখ করুন।
- আপনার কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন। আপনার পদ, কোম্পানির নাম, এবং কাজের সময়কাল উল্লেখ করুন।
- আপনার নিয়োগকর্তার নাম, ঠিকানা, এবং কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করুন।
- আপনার চাকরির পদ, কাজের বিবরণ, এবং বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিন।
- নিয়োগকর্তার স্পন্সরশিপ সার্টিফিকেট নম্বর উল্লেখ করুন।
- আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দিন।
- যদি আপনার স্পন্সর আপনাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, তবে তার বিবরণ উল্লেখ করুন।
- আপনার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কিনা, তা উল্লেখ করুন। যদি থাকে, তবে তার বিস্তারিত বিবরণ দিন।
- আপনি আগে কখনো ইউকেতে এসেছেন কিনা, এবং আপনার ভিসার ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য দিন।
ফর্ম জমা দেওয়ার নিয়ম
- ফর্ম পূরণ করার পর, এটি জমা দেওয়ার আগে ভালোভাবে দেখে নিন। কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন।
- সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করুন। প্রতিটি ডকুমেন্টের সাইজ এবং ফরম্যাট যেন নির্দিষ্ট থাকে।
- ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ভিসার ফি পরিশোধ করুন।
- ভিসা সেন্টারে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি) দেওয়ার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন।
- সবশেষে, অনলাইন ফর্মটি সাবমিট করুন এবং একটি কপি ডাউনলোড করে রাখুন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়
কিছু টিপস অনুসরণ করে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন:
- যুক্তরাজ্যে চাহিদা আছে এমন কোনো কাজের জন্য আবেদন করুন।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।
- IELTS বা অন্য কোনো ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় ভালো স্কোর করুন।
- ফর্মটি নির্ভুলভাবে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিন।
- আপনার আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন।
ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য কোন ফরম ব্যবহার করা হয়?
ইউকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য সাধারণত Skilled Worker visa -এর অনলাইন ফর্ম ব্যবহার করা হয়।
FAQs
ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে কতদিন লাগে?
আবেদনের সময় সাধারণত ভিসার প্রকার এবং প্রক্রিয়াকরণের গতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, এটি ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি আরও বেশি সময় নিতে পারে।
ইউকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত?
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ভিসার প্রকারের উপর নির্ভর করে। Skilled Worker ভিসার জন্য সাধারণত ৬২৫ পাউন্ড থেকে শুরু করে ১৪০৮ পাউন্ড পর্যন্ত লাগতে পারে। এর সাথে অন্যান্য ফি যেমন ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ যুক্ত হতে পারে।
আমি কি আমার পরিবারের সদস্যদের ইউকেতে নিয়ে যেতে পারবো?
হ্যাঁ, আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের (যেমন স্ত্রী/স্বামী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান) আপনার সাথে ইউকেতে নিয়ে যেতে পারবেন। তবে, তাদের জন্য আলাদা ভিসার আবেদন করতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার পর আমি কি চাকরি পরিবর্তন করতে পারবো?
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার জন্য দেওয়া হয়। আপনি যদি চাকরি পরিবর্তন করতে চান, তবে আপনাকে নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হতে পারে।
আমার আবেদন বাতিল হলে আমি কি করবো?
যদি আপনার আবেদন বাতিল হয়, তবে আপনি আপিল করতে পারেন অথবা পুনরায় আবেদন করতে পারেন। আপিল করার সময় আপনাকে বাতিলের কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং এর স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে।
আরো জানুনঃ
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা-আবেদন পদ্ধতি ও খরচ।