ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার নিয়ম।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদনঃ এখন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আপনাকে আর দিনের পর দিন BRTA অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। থার্ডপার্টি বা কোন দালালের শরণাপন্ন হতে হবে না। এখন থেকে ঘরে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করা যাবে মাত্র এক দিনেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার পর ২০ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স পৌঁছে যাবে আপনার হাতে।
BRTA (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী ১৬ নভেম্বর ২০২২ সালের পর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করতে পারবেন যেকেউ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার জন্য শুরুতেই ড্রাইভিং লাইসেন্সর BSP PORTAL ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট তৈরি করে নিন। তারপর লার্নার লাইসেন্সর জন্য আবেদন করুন। লার্নার লাইসেন্স এর জন্য আবেদনের পর আপনাকে একটি Exam date দেওয়া হবে। সেই Date এ গিয়ে Test কমপ্লিট করুন এবং আনুষঙ্গিক সকল কাজ করে নিন। এর জন্য হয়তো আপনাকে ঐ দিন সম্পূর্ণ ব্যয় করতে হবে।
যদিও পূর্বে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদাভাবে BRTS যেতে হতো। যেমন: ভাইবা, প্র্যাকটিক্যাল, টেষ্ট ইত্যাদি। এখন একদিনেই সব কিছু কমপ্লিট করে আসা সম্ভব। তাই প্রথমে অনলাইনে লার্নার লাইসেন্স করে নিন। তারপর Exam date এ সকাল সকাল গিয়ে Exam দিয়ে গেটে প্রবেশ করুন। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড থাকবে তাদের লার্নার লাইসেন্স দেখালে তারা আপনাকে বায়োমেট্রিক এর জন্য নিয়ে যাবে। অনেক সময় Exam এর পূর্বেও বায়োমেট্রিক নিয়ে নেওয়া হয়। সেটি খেয়াল রাখুন।
Present দেওয়ার পর শুরুতেই Written পরিক্ষাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। তারপর ভাইবাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাইকে যাওয়ার পর আপনাকে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দেওয়ার পূর্বে আপনাকে লার্নার লাইসেন্স জমা দিতে হবে। আপনি যদি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় পাশ করেন তাহলে লার্নার লাইসেন্স এর পিছনে আপনার রেজাল্ট লিখে দেওয়া হবে। পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর আপনার BRTS এর কাজ সম্পন্ন হবে। তারপর বাসায় ফিরে আসুন।
বাসায় এসে রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স একাউন্টে লগইন করুন। একাউন্টে লগইন করার পর মেনুবারে কৃতকার্য বা অকৃতকার্য লেখা থাকবে। যদি কোনটাই লেখা না থাকে তাহলে আরোও কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করুন। তারপর আবার চেক করুন।
রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন। এ পর্যায়ে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। যেমন:-
- আপনার লার্নার লাইসেন্সের ফ্রন্টসাইট ও ব্যাকসাইটের স্ক্যান কপি
- স্কুল সার্টিফিকেট
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র
অর্থাৎ লার্নার একাউন্ট করার সময় আপনি যে যে ডকুমেন্টগুলো সাবমিট করেছেন সেই সবগুলোই এখানে সাবমিট করতে হবে। কোন ডকুমেন্ট বাদ থাকলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তাই সঠিকভাবে সকল ডকুমেন্ট আপলোডের পর “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
এখন থেকে আপনাকে ডকুমেন্ট সংগ্রহের ঠিকানা সাবমিট করতে হবে অর্থাৎ আপনি ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে যদি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি গ্রহণ করতে চান তাহলে সেই ঠিকানাটি দাখিল করুন। ঠিকানা সাবমিট করার পর আবারও “পরবর্তী” বাটনে ক্লকি করুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি প্রদান ও ডাউনলোড করার নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এর এ পর্যায়ে আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেমেন্ট প্রদান করতে হবে। পেমেন্ট করার জন্য আপনি বিকাশ, রকেট অথবা নগদ যে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্য নিতে পারেন। তবে পেমেন্ট করার পূর্বে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং রাত দশটার পূর্বে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। কেননা রাত দশটার পরে কোন পেমেন্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। পেমেন্ট করার পর পেমেন্ট ডিটেইলস দিয়ে আবেদন সাবমিট করুন।
আপনার আবেদনটি সাবমিট করার পর বিটিআরসি আপনার আবেদনটি ভেরিফাই করবে। যদি আপনার সকল ডকুমেন্ট ও কাগজপত্র সঠিক থাকে তাহলে আপনি আগামী দুই কার্য দিবসের মধ্যে আপনার লার্নার একাউন্টে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি দেখতে পাবেন। এখন প্রিন্ট লাইসেন্স অপশনে ক্লিক করে আপনার লাইসেন্সটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে এই লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি ড্রাইভিং শুরু করতে পারেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এর এ পর্যায়ে ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি পেয়ে গেলে DL Checker অ্যাপের মধ্য থেকে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য প্রথমে গুগল প্লেস্টোর থেকে DL Checker অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন।
তারপর অ্যাপটি ওপেন করুন। যদিও DL অ্যাপ দিয়ে পূর্বে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে প্রবলেম হতো কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। এটা BRTS থেকে সম্প্রতি সময়ে আপডেট করা হয়েছে। এখন থেকে DL অ্যাপ ব্যবহার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কিত সকল তথ্য দেখতে পাবেন।
DL অ্যাপটি ওপেন করার পর আপনার সামনে একটি সার্চ বক্স ওপেন হবে। তার নিচে দুটি অপশন দেখতে পাবেন।
- DL No ও
- BRTA Ref No
DL No দিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি আসল নাকি নকল সেটা চেক করতে পারবেন। সেটি করার জন্য নিচে থেকে DL No সিলেক্ট করে সার্চবক্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর দিয়ে Get data অপশনে ক্লিক করুন।
BRTA Ref No দিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বর্তমান স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। BRTA Ref No এটি আপনি আপনার ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্সের উপরে দেখতে পাবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এর বর্তমান স্ট্যাটাস জানার জন্য প্রথমে নিচে থেকে BRTA Ref No অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর সার্চবক্সে BRTA Ref No বসিয়ে Get data বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের বর্তমান স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। যদি স্ট্যাটাস Pending দেখেন তাহলে বুঝবেন আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি এখনও তৈরি হয়নি।
আর যদি shipment received in circle এটা লেখা থাকে তাহলে বুঝবেন ড্রাইভিং লাইসেন্সটি তৈরি হয়েছে আপনি চাইলে BRTS অফিস থেকে সেটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার পর আপনি যদি কিছু দিন অপেক্ষা করেন তাহলে ডাকপিওন আপনার বাসায় এসে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি আপনার হাতে দিয়ে যাবে। সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের ২০-৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সেটি হাতে পেয়ে যাবেন।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে DL অ্যাপে ড্রইভিং লাইসেন্স চেক করলে কোন তথ্য দেখা যায় না। তাদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। মূলত দুটি কারণে এমন সমস্যা দেখাতে পারে। প্রথমটি হলো হয়ত আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি এখনও Pending । আর ২য় কারণটি হলো হয়তো অ্যাপে কোন টেকনিক ইস্যু বা আপডেট চলছে।
তবে মনে রাখবেন, যদি ডেলিভারি ডেট পার হয়ে যাওয়ার পরেও DL অ্যাপে কোন তথ্য শো না করে তাহলে অতিসত্বর আপনার ই-পেপার লাইসেন্সটি নিয়ে BRTS অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার স্লিপ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে আপনাকে আপডেট জানিয়ে দিবে।
আশা করি আপনারা বুঝতে পারেছেন কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করতে হয়। এরকমও আরোও তথ্যবহুল পোস্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
আরো জানতে পড়ুনঃ
অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং করার নিয়ম