গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও যত্ন।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। বিয়ের পরে প্রত্যেক নববধূর স্বপ্ন থাকে মা হওয়ার। কিন্তু হঠাৎ গর্ভবতী হওয়ার পরে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে হতাশ হয়ে পড়েন যে, কিভাবে কি করতে হবে? এ সময় কি কি খাওয়া উচিত এবং কোনটি অনুচিত ইত্যাদি। তাদের জন্য আজকের পোস্টি।
এই পোস্টে আমরা গর্ভবতী মায়ের যত্ন, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা, আদর্শ জীবনযাত্রা ও গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করি।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে যে আমরা অনেকে মনে করি গর্ভধারণের পূর্ব লক্ষণ পিরিয়ড মিচ হওয়া। মূলত গর্ভবতী বা প্রেগনেন্সি ছাড়াও অনেক সময় পিরিয়ড মিস হতে পারে। যেমন: গর্ভ নিয়ন্ত্রিত পিল গ্রহণ, শারীরিক দুর্বলতা, অনিদ্রা, অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, হঠাৎ কায়িক শ্রম ইত্যাদি।
তাহলে কি করে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী কিনা? এটা বোঝার জন্য নজর রাখুন এই কয়েকটি লক্ষণে:-
- পিরিয়ড মিচ হওয়া।
- খাবারে অরুচি।
- বমি বমি ভাব।
- স্তন ব্যথা।
- শারীরিক দুর্বলতা।
- মাথা ঘুরানো ।
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও প্রেগনেন্সি পরীক্ষার কিট ব্যবহার করেও কনফর্ম হতে পারেন আপনি প্রেগনেন্সি বা গর্ভবতী কিনা।
গর্ভকালীন প্রাথমিক সেবা
একজন মায়ের গর্ভকালীন সময়ে প্রথমদিকে যেসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত তা হলঃ
গর্ভ ধারণের পর পরই একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া। গর্ভ ধারণের সময় থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত ২৮ সপ্তাহে প্রতিমাসে একবার বা সপ্তাহে একবার করে নিকটস্থ্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অথবা একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
গর্ভকালীন প্রথম ৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২টি টিটি টিকা গ্রহণ করা।
অধিক পরিমানে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও পর্যাপ্ত পানি পান করা।
গর্ভকালীন সময়ে ভারি কাজ করা কিংবা অপ্রয়োজনীয় হাটাহাটি পরিহার করা।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম (দৈনিক ৮ ঘন্টা) নিশ্চিত করা।
পোশাক পরিচ্ছেদ
একজন গর্ভবতী মায়ের পোশাক পরিচ্ছেদেও বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। অর্থাৎ এ সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা, নরম আরামদায়ক জুতা পরা এবং হিল জুতা পরিহার করা।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভ ধারণের কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় যার ফলে দেখা দিতে পারে রক্ত স্বল্পতা। কারণ মায়ের শরীর থেকে মূল্যবান পুষ্টিগুণ গর্ভস্থ শিশুর দেহে শোষিত হয়। তাই মা ও শিশুর যত্নে পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।
দুগ্ধজাত খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে গর্ভধারণের প্রথম মাসে গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরমানে ক্যালসিয়াম, ক্যালরি ও লৌহ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। কারণ এ সময় গর্ভবতী মা যে খাবার খান সেটা তারা নবজাতক সন্তানের বেড়ে ওঠাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই এসময় প্রচুর পরিমানে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন: দই, পনির, চিজ ও মাখন বেশি পরিমানে খেতে হবে।
আমিষ জাতীয় খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। দেশি মাছ ও সামুদ্রিক মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে আমিষ পাওয়া যায়।
শাক সবজিঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে সবুজ শাক সবজি থাকা জরুরী। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-সবজি যেমন: ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রোকলি, পালংশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়ো, টমেটো, আলু, গাজর, লাউ, ভুট্টা ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
শস্য জাতীয় খাবারঃ
গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য শস্য জাতীয় খাবার খুবই প্রয়োজনীয়। যেমন: ওটমিল, যব, বাদামী চাল, বাজরা, ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের ভালো উৎস। সুতরাং গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা এর দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার রাখা উচিত কেননা এতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। যা মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী।
আয়োডিন
আয়োডিন স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ বা লবন ব্যবহার করুন।
ফাইবার
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার রাখা অতি জরুরি। ফাইবার দেহের কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং গ্লুকোজের মাত্রা কম করে। সাধারণত শিম জাতীয় খাবার যেমন মটরশুঁটি, শিম, ডাল ও ফলমূল জাতীয় খাবার যেমন: আপেল, কমলা, গাজর ও শসা ফাইবারের ভালো উৎস।
পরিকল্পিত প্রজনন
সন্তান ধারনের পূর্বে পরিকল্পিতভাবে সন্তান নেওয়া গেলে মা ও শিশু উভয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ্য থাকে। অর্থাৎ গর্ভধারণের পূর্বে যদি পিতা মাতার শারীরিক কিছু পরিক্ষা করা হয় তাহলে সন্তান ও সুস্থ্য থাকে। যেমন: ডায়াবেটিস, এলার্জি জন্ডিস, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের পরিক্ষা করা।
এছাড়াও বংশগত কোন রোগ থাকলে গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড, অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ সহ গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা এর দিকে নজর দিতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের যত্ন (১ম তিন মাস)
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তো জানলাম। গর্ভধারণের পর থেকে প্রথম তিন মাস পর্যন্ত বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
একই সাথে বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে বমি নাশক, ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। এছাড়াও এ সময় মায়ের রক্তের গ্রুপ, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে রাখা উচিত।
উপরিউক্ত বিষয় গুলো মাথায় রেখে একজন গর্ভবতী মায়ের যত্ন/সেবা নিশ্চিত করা গেলে একজন সুস্থ্য মা ও শিশু উপহার পাবেন।
আরো জানুনঃ
প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা জেনে নিন।
মুখের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়।
তথ্য সংগ্রহঃ
প্রফেসর ডাঃ মোঃ আব্বাস উদ্দিন খান।
MBBS(Dhaka), MD(Child Health), DU Specialist for Newborns, Children, and Teenagers Disease, Gazipur, Dhaka. প্রোফাইল