কম খরচে সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় ২০২৫

শেয়ার করুন

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় খুঁজছেন? তাহলে এই পোস্টে আপনার জন্য। জাপানে গেলে আর্থিক সচ্ছলতার পথ অনেক উজ্জ্বল হয়। উন্নত বেতন ও কর্মপরিবেশের কারণে সেখানে কাজ করে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবেন। সরকারি ভাবে গেলে নিয়মিত বেতন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।

জাপানের কর্মসংস্থান প্রোগ্রামে দক্ষতা অনুযায়ী সুযোগ পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতে আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে আসে। এই পোস্টে আমি জানাবো কম খরচে সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়, সরকারিভাবে কেন আপনি জাপানে যাবেন? কি কি কাগজপত্র লাগবে। কী কী যোগ্যতা লাগবে, কিভাবে আবেদন করবেন, সে বিষয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশাকরি আপনার সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে।

সরকারিভাবে কেন আপনি জাপান যাবেন?

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ প্রথমে জেনে নিন কেনা আপনি সরকারিভাবে জাপান যাবেন। সরকারিভাবে জাপান যাওয়া মানে আপনি সরকার অনুমোদিত স্বচ্ছ ও নিরাপদ প্রক্রিয়ায় জাপান যাচ্ছেন। এটি শুধু প্রতারণা থেকে সুরক্ষা দেয় না, বরং আর্থিকভাবে ও পেশাগত দিক থেকেও অনেক সুবিধা পাবেন। যেমন-

  1. দালাল বা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়ায় আপনার ঝুকি থাকবে। ভিসা জালিয়াতি,ভুয়া অফার লেটার, টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা ঘটে থাকে।
  2. সরকারি ভাবে গেলে সমস্ত প্রক্রিয়া সরকারের তত্ত্বাবধানে হয় ফলে প্রতারণার সুযোগ খুবই কম থাকে।
  3. বেসরকারি এজেন্সির তুলনায় সরকারিভাবে জাপানে গেলে খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। যেমন আপনি যদি সরকারি ভাবে যেতে চান তাহলে ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। অপর দিকে দালালের মাধ্যমে গেলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েক লক্ষ টাকা দিতে হবে।
  4. সরকারি চ্যানেলে আপনি জাপানে গেলে কাজ শুরু হওয়ার আগেই আপনার বেতন,কাজের সময়, সুবিধা ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
  5. এছাড়াও সরকারিভাবে পাঠানো কাগজপত্র সঠিক ও যাচাইকৃত হওয়ায় ভিসা রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কিন্তু কম থাকে এবং নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সুপারিশ থাকায় ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
  6. সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার পূর্বেই বিএমইটি ও অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাপানি ভাষা সাংস্কৃতি ও কাজের দক্ষতা বিষয়ে বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে আপনাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে করে জাপানে গিয়ে মানিয়ে নেয়াটা আপনার পক্ষে খুব সহজ হবে।
  7. সরকারিভাবে জাপানে গেলে আইনগত সুরক্ষা আপনি পাবেন। যেমন কর্মসংস্থানে কোন সমস্যা হলে বাংলাদেশ দূতাবাস ও BOESL আপনার পক্ষে আইনি সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়া অন্য কোন সমস্যা হলে সরকারি চ্যানেলে অভিযোগ জানানো যায়।
  8. সরকারি প্রোগ্রামের মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন (TITP) বা স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার (SSW) ভিসায় জাপানে গেলে ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে থাকার বা দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন।অনেক ক্ষেত্রে পরিবারকেও নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
  9. সুতরাং, সরকারি ভাবে জাপান গেলে আপনি কম খরচে, প্রতারণা ছাড়া, চাকরির নিশ্চয়তা ও আইনগত সুরক্ষা ইত্যাদি একসাথে পাবেন। এটা বিশেষ করে প্রথমবার বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

অনলাইনে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ এবার জেনে নেবো আবেদনে কি কি কাগজপত্র লাগবে। কি কি লাগবে তা নীচে দেয়া হলোঃ

  • বৈধ পাসপোর্ট (মেয়াদ অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে) – প্রথম ২ পাতা ও শেষ পাতা স্ক্যান কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা স্মার্টকার্ড
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, JPEG ফরম্যাট)
  • এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের সনদপত্র ও মার্কশিট
  • উচ্চতর শিক্ষাগত সনদ (যদি থাকে)
  • কারিগরি বা পেশাগত প্রশিক্ষণ সনদ (যদি থাকে)
  • জাপানি ভাষা দক্ষতার সনদ পত্র (JLPT N4/N5/ JFT Basic)
  • নির্দিষ্ট পেশার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার সার্টিফিকেট (যেমন: ইলেকট্রিক্যাল, ওয়েল্ডিং, কেয়ারগিভার ইত্যাদি)
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট (BMET অনুমোদিত সেন্টার থেকে)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (সর্বশেষ ৬ মাসের মধ্যে)
  • পূর্ববর্তী বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণ (ভিসা/ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্প)
  • পূর্ববর্তী কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতার সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • বৈবাহিক অবস্থা অনুযায়ী বিবাহ সনদ বা জন্ম সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)

আবেদন করার আগে কিছু টিপস জেনে নিন।

  • সব ডকুমেন্ট PDF বা JPEG ফরম্যাটে স্ক্যান করুন।
  • ফাইল সাইজ সাধারণত ২ এমবি’র নিচে রাখুন।
  • নাম ও জন্মতারিখ যেন সব ডকুমেন্টে মিল থাকে।
  • ভুল বানান বা অস্পষ্ট ছবি যেন না থাকে।

অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ এবার আমি আপনাদেরকে জানাবো অনলাইনে আপনি কিভাবে আবেদন করবেন।

  • প্রথমে BOESL (www.boesl.gov.bd) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
  • অথবা সরাসরি ওয়েবসাইটে ঢুকতে এখানে ক্লিক করুন।
  • সেখান থেকে জাপান ইমিগ্রেশন বা ট্রেনিং প্রোগ্রামের বিজ্ঞপ্তি খুঁজে নিন। (অবশ্য সরকার যখন বিজ্ঞপ্তি দিবে তখনই আপনি এই অপশনটি দেখতে পাবেন)
  • এখানে আপনি যদি নতুন হন তাহলে আপনাকে প্রথমেই রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • রেজিস্ট্রেশন করতে আপনার নাম, ইমেইল, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে দিন।
  • একটি ভেরিফিকেশন কোড আপনার মোবাইলে আসবে, যা ব্যবহার করে আপনি একাউন্ট ভেরিফাই করুন।
  • এবার একাউন্ট লগইন করার পর, সরকার কর্তৃক প্রদেয় বিজ্ঞপ্তি ভালভাবে পড়ে নিন এখানে ক্লিক করে।

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায়

  • পড়ার পর জাপান যাওয়ার প্রোগ্রামের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফর্ম এ/Applyতে  ক্লিক করুন।
  • এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা,কাজের অভিজ্ঞতা,ভাষা দক্ষতা ইত্যাদি তথ্য পূরণ করতে হবে। সাবধানে তথ্য দিন,ভুল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • এবার উল্লেখিত সব ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদ, স্বাস্থ্য সনদ, ছবি ইত্যাদি) আপলোড করুন।
  • ( সব ডকুমেন্ট অবশ্যই পরিষ্কার ও স্পষ্ট হতে হবে)
  • ফাইলের আকার ও ফরম্যাট ওয়েবসাইটের নির্দেশিকা অনুযায়ী রাখতে হবে।
  • সরকারি আবেদন ফি থাকলে অনলাইনে পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে হবে অথবা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা প্রদান করে স্লিপ গ্রহণ করবেন।
  • সব তথ্য ও ডকুমেন্ট যাচাই করে “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
  • সফল সাবমিটের পর একটি রেফারেন্স নম্বর বা আবেদন আইডি পাবেন সেটা সংরক্ষণ করে রাখবেন।
  • সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ আবেদন আইডি ব্যবহার করে সময়ে সময়ে ওয়েবসাইটে লগইন করে আবেদন অবস্থা দেখতে পারবেন।

স্মরণ রাখার বিষয়সমূহ

  • পরীক্ষার সময়, ইন্টারভিউ সময়সূচি এবং ফলাফল ওয়েবসাইটে আপডেট হয়।
  • যোগ্য হলে আপনাকে ভাষা ও দক্ষতা পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
  • প্রস্তুতি নিয়ে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
  • নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য BOESL/BMET মাধ্যমে ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
  • এরপর বিমান টিকিট ও যাত্রার প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

সরকারিভাবে জাপানে যেতে কত টাকা লাগে?

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ এবার জেনে নেবো সেখানে যেতে কত টাকা লাগে। সরকারিভাবে জাপানে যেতে খরচ নির্ভর করে প্রোগ্রাম, ভিসার ধরন, এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ওপর। সাধারণত বাংলাদেশের জন্য সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে (যেমন BOESL বা BMET) জাপানে যাওয়ার মোট খরচ প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এই খরেচের মধ্যে রয়েছে- আবেদন ফি, মেডিকেল পরীক্ষা খরচ, জাপানি ভাষা ও প্রশিক্ষণের খরচ (যদি থাকে), ভিসা ফি, বিমান টিকিট (কিছু ক্ষেত্রে সরকার বা নিয়োগকর্তা পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়া যায়),অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যেমন ডকুমেন্টেশন ও প্রক্রিয়াজাত খরচ ইত্যাদি। বেসরকারি এজেন্সির চেয়ে সরকারি পথে খরচ অনেক কম ও স্বচ্ছ। খরচের বিস্তারিত জানতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপডেটেড তথ্য জেনে নিবেন।

সরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা জানা কি জরুরী?

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ এবার জানবো জাপানি ভাষা জানা কি জরুরী? হ্যাঁ, সরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা জানা জরুরি। কারণ অধিকাংশ সরকারি প্রোগ্রামে (যেমন TITP বা SSW) জাপানি ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতা (সাধারণত JLPT N4 বা তার সমতুল্য) থাকা বাধ্যতামূলক।ভাষা জানা থাকলে কাজের পরিবেশে মানিয়ে নিতে সহজ হয়। নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ ভালো হয়।

সরকারি প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা চলাকালে ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়। জাপানে থাকা ও দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা, সরকারি কাজকর্ম, স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার জন্য ভাষা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই,সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ আবেদন করার আগে আপনাকে কমপক্ষে জাপানি ভাষার বেসিক কোর্সটি শেখা অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয়।

জাপানে সরকারিভাবে কি কি ভিসা পাওয়া যায়?

সরকারিভাবে জাপান যাওয়ার উপায় এ এবার আমি জানাবো জাপানে কি কি ভিসা পাওয়া যায়। জাপানে সরকারিভাবে যাওয়া বা অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা পাওয়া যায়,সেগুলো প্রধানত ভ্রমণ, কাজ, শিক্ষা বা গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। নিচে সরকারি ভিসার ধরণগুলো দেওয়া হলো:

  • টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP) ভিসা
  • স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার (SSW) ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • গবেষক ও প্রশিক্ষণার্থী ভিসা
  • বিজনেস বা কর্মচারী ভিসা
  • পরিবারিক একত্রিতকরণ ভিসা

আরো জানুনঃ 

কুয়েত থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় জেনে নিন

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *