কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা,আবেদন,খরচ,যোগ্যতা ও সুবিধা ২০২৫

শেয়ার করুন

কানাডা পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ। সেখানে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ভিসায় কানাডায় যাওয়া গেলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিসা হলো কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা।এ ভিসার মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকরা কানাডায় গিয়ে বয়স্ক লোক, শিশু অথবা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সেবা যত্ন নেওয়ার কাজ করে থাকেন।কানাডায় কেয়ারগিভারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আমাদের দেশ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশের লোকজন কানাডায় কেয়ারগিভার ভিসার প্রতি আগ্রহী।

এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা কি, এর বিভিন্ন ধরন, কি কি যোগ্যতা থাকলে এই ভিসা পাওয়া যায়, আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ, সুবিধা অসুবিধা সহ ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার উপায়।মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ুন।

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা কী?

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা হল একটি বিশেষ ধরনের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট যা বিদেশি নাগরিককে কানাডায় গিয়ে কোন নিয়োগকর্তার অধীনে কেয়ারগিভার হিসেবে কাজ করতে হয়। এই ভিসার প্রধান উদ্দেশ্য হল, ১।শিশুদের যত্ন নেয়া ও দেখাশোনা করা ২।বয়স্ক ব্যক্তি অথবা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সেবা করা। সাধারণত এ ভিসাতে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষে কানাডায় স্থায়ী বসবাস এর জন্য আবেদন করা যায়।

কেয়ারগিভার ভিসা কত প্রকার?

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা মূলত দুই ধরনের। যথা-

১। হোম চাইল্ড কেয়ার প্রোভাইডার( HCCP):এই ভিসাতে নিয়োগকৃত ব্যক্তিগণ সাধারণত 18 বছরের নিচে শিশুদের যত্ন নিয়ে থাকেন। যেমন, তাদের খাওয়ানো,পড়াশোনায় সহযোগিতা করা,স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজ,খেলার সময় দেখাশোনা করা ইত্যাদি। তাদের মা-বাবা কাজের কারণে বাইরে গেলে সে সময় শিশুদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি।

২। হোম সাপোর্টার ওয়ার্কার (HSW): এই ভিসাটি মূলত বয়স্ক,অসুস্থ অথবা প্রতিবন্ধী যেসব ব্যক্তি আছে তাদেরকে দেখাশোনা করার জন্য দিয়ে থাক।তারা দৈনন্দিন কাজ যেমন, খাদ্য খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানো, ব্যায়াম করানো, চলাফেরা ইত্যাদি কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এছাড়া গৃহস্থলীর কাজও তারা করে থাকেন।

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার যোগ্যতা

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সাধারণত এই শর্তগুলো পূরণ না করলে আপনি ভিসা পাবেন না।শর্তগুলো হল-

  • আপনাকে ন্যূনতম হাইস্কুল পাস হতে হবে।
  • কেয়ার গিভিং ট্রেনিং অথবা নার্সিং বা স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত কোনো ডিপ্লোমা থাকলে,সেক্ষেত্রে আপনি বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন।তবে অভিজ্ঞতা ছাড়াও প্রশিক্ষণ নিয়ে আবেদন করা যাবে।
  • ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় IELTS/CELPIP থাকতে হবে।যাতে করে আপনি তাদের সাথে মতবিনিময় করতে পারেন।
  • নিয়োগকর্তার কাছ থেকে জব অফার লেটার/জব সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
  • নিজের খরচ মেটানোর জন্য কিছু আর্থিক প্রমাণপত্র লাগবে।

কেয়ারগিভার ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

উপরে উল্লেখিত যোগ্যতা ছাড়াও যেসব ডকুমেন্টগুলো আপনার দরকার যেটি সঠিকভাবে জমা দিলে আবেদন রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সেগুলো নিম্নরূপ-

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট যেটির মেয়াদ থাকতে হবে।
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • নির্ধারিত আবেদন পত্র।
  • কেয়ারগিভার ট্রেনিং সার্টিফিকেট যদি আপনার থাকে।
  • ইংরেজি ভাষাগত টেস্টের ফলাফল।
  • শিক্ষাগত সনদপত্র।
  • চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ।
  • আপনার নিয়োগকর্তার জব অফার লেটার।
  • থানা থেকে প্রাপ্ত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার সার্টিফিকেট/ মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • প্রসেসিং কি প্রদানের রিসিপ্ট কপি, ইত্যাদি।

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার সুবিধা

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার কিছু সুবিধা রয়েছে।যেটি অন্যান্য ভিসার তুলনায় কিছুটা আলাদা। সুবিধাগুলো নিম্নরূপ-

  • কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার চাহিদা অনেক বেশি তাই কাজ হারানোর ভয় অনেকটা কম।
  • নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষে আপনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার আবেদন করতে পারবেন।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট বা স্টাডি পারমিট ভিসার মাধ্যমে কানাডায় থাকতে পারবেন।
  • এই ভিসাতো আপনি কানাডায় আকর্ষণীয় বেতন পাবেন।
  • এই ভিসার মাধ্যমে গেলে কানাডায় স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক সুবিধাও আপনি পাবেন।

কেয়ারগিভার ভিসার অসুবিধা

এই ভিসার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ

  • বয়স্ক বা অসুস্থ ব্যক্তিকে সারাক্ষণ দেখাশোনা করতে হয় বিধায় কাজের চাপ বেড়ে যায়।
  • অনেক সময় পরিবারকে সাথে নিয়ে কানাডায় যাওয়া সম্ভব হয় না বিধায় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়।
  • আবেদন করার পর ভিসা পেতে অনেক সময় লাগে।
  • ইংরেজি ভাষা জানার বাধ্যবাধকতা আছে অর্থাৎ কাঙ্খিত স্কোর না থাকলে ভিসা পাওয়া যায় না।
  • ওপরে উল্লেখিত কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত না করলে আপনার আবেদনটি রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসার বেতন

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসাতে বেতন প্রদেশ ভেদে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। যেমন আনটারিও ও ব্রিটিশ কলম্বিয়ার তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেতন কিছুটা বেশি। এই ভিসাতে আপনি কানাডায় গেলে আনুমানিক যে বেতন পাবেন সেটা নিম্নরূপ।

  • ঘন্টা পতি আনুমানিক ১৫ থেকে ২২ কানাডিয়ান ডলার।
  • মাসিক বেতন হিসাবে আপনি ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কানাডিয়ান ডলার পাবেন।
  • এছাড়া বার্ষিক বেতন হিসেবে প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৪২,০০০ কানাডিয়ান ডলার পাবেন।

কেয়ারগিভার ভিসা থেকে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

কেয়ারগিভার ভিসার অন্যতম সুবিধা হল PR/স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ। আপনি যদি এই ভিসাতে সেখানে যান, চাকুরী শেষে এই সুবিধা পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। শর্তগুলো হলো-

  • আপনাকে কমপক্ষে ২৪ মাস ফুলটাইম কেয়ারগিভার হিসাবে কাজ করতে হবে।
  • আপনার জব অফারটি বৈধ থাকতে হবে।
  • স্বাস্থ্যগত ভালো রিপোর্ট ও সৎচরিত্র থাকতে হবে।

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা আবেদন করার নিয়ম

কানাডা কেয়ারগিভার ভিসা আবেদন করার পূর্বে উপরে উল্লেখিত সকল যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে নিন।আপনার সকল ডকুমেন্টসগুলো যেন সঠিক হয়। এবার আবেদন করার জন্য কানাডার ইমিগ্রেশন রিফিউজি ও সিটিজেনশিপ কানাডা এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সঠিক নিয়মে আপনার আবেদনটি করুন। অনলাইনের মাধ্যমে প্রসেসিং ফি এবং বায়োমেট্রিক ফি জমা দিন। সরাসরি ওয়েবসাইটটিতে ঢুকতে এখানে ক্লিক করুন।

আবেদন জমা দেয়ার পর কিছুদিন অপেক্ষা করুন। আপনাকে বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। আর সবকিছু আপনার নিকটস্থ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে দিতে হবে।আপনার প্রদত্ত সব ডকুমেন্টস ও তথ্য সঠিক থাকলে আপনার আবেদন অনুমোদিত হবে। সেক্ষেত্রে আপনি ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পাবেন।এরপর আপনি কানাডায় গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • টাকা দিয়ে চাকরি বা ভিসা কেনার চেষ্টা কখনোই করবেন না এতে আপনার প্রতারিত হওয়ার অনেক ঝুঁকি থাকবে।
  • আবেদন প্রক্রিয়াটি আপনার কাছে কিছুটা জটিল হতে পারে সেক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন।
  •  আবেদন ফরম জমা দেয়ার আগে আপনার চেকলিস্ট টি ভালোভাবে মিলিয়ে নিন।
  •  IELTS স্কোর যাতে কম না হয় সেজন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
  • আবেদনে কখনো ভুল তথ্য দিবেন না। সঠিক তথ্যটাই দিবেন।

শেষ কথা

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষের জন্য কানাডায় কেয়ারগিভার ভিসায় যাওয়া একটি দারুন সুযোগ। আপনারা যারা বিদেশ থেকে আয় করতে চান এবং ভবিষ্যতে পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান,তাদের জন্য এই ভিসাটি খুবই চমৎকার।তবে সঠিক ডকুমেন্টস,ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, বৈধ জবলেটার ছাড়া আপনি কখনোই সেখানে যেতে পারবেন না। তাই উপরের সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করুন এবং সেখানে গিয়ে নিজের এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থা মজবুত করুন।

কেয়ারগিভার ভিসা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর FAQ

১। কানাডায় কেয়ারগিভার হওয়ার যোগ্যতা কি?

উত্তর- কমপক্ষে হাই স্কুল পাস হতে হবে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং বৈধ জব অফার লেটার থাকতে হবে।

২। ভিজিট ভিসায় কি কানাডায় কেয়ারগিভার হিসাবে কাজ করা যায় ?

উত্তর- না, ভিজিট ভিসা দেয় কেবলমাত্র ভ্রমণের জন্য। কেয়ারগিভার ভিসা পেতে হলে এই পোস্টের সকল শর্ত মেনে আবেদন করতে হবে।

৩। কানাডায় কেয়ারগিভার এর জন্য নতুন নীতিমালা কী?

উত্তর-২০২৫ সালে চালু হওয়া Caregiver Pilot Programs এর মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কানাডায় যেতে পারবেন। সেখানে ২৪ মাস পুর্ণকালীন কাজ করে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

৪। কানাডা কেয়ারগিভার কোর্স কতদিন লাগে?

উত্তর-সাধারণত ৬ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে এই কোর্সটি আপনি সম্পন্ন করতে পারেন। তবে কোর্সের ধরণ ও প্রতিষ্ঠানের উপর সময়টা কিছুটা নির্ভর করে।

৫। কানাডায় কেয়ারগিভারের বেতন কত?

উত্তর-গড় বেতন ঘন্টায় ১৫ থেকে ২২ কানাডিয়ান ডলার। মাসে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কানাডিয়ান ডলার এবং বছরে প্রায় ৩০০০০ থেকে ৪২০০০ কানাডিয়ান ডলার।

৬। কেয়ারগিভারদের বেতন সবচেয়ে বেশি কোন দেশে?

উত্তর- সাধারণত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, এবং অস্ট্রেলিয়াতে কেয়ারগিভারদের বেতন সবচেয়ে বেশি।

৭। ফিলিপিনো কেয়ারগিভারদের জন্য কোন দেশ ভালো?

উত্তর- কানাডা,যুক্তরাষ্ট্র, হংকং,সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে ফিলিপিনোদের প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে।

৮। কানাডায় কেয়ারগিভার কোর্স খরচ কত?

উত্তর-কানাডায় কেয়ারগিভার কোর্স খরচ ৩০০০ থেকে ৮০০০ কানাডিয়ান ডলার।

 ৯। কানাডায় কেয়ারগিভারের বয়সসীমা কত?

উত্তর-সাধারণত ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা কেয়ারগিভার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

১০। IELTS ছাড়া কি আবেদন করা যাবে?

উত্তর- না,আপনাকে ন্যূনতম CLB 5 লেভেল অর্জন করতে হবে।

আরো জানুনঃ

সিঙ্গাপুর এমপ্লয়মেন্ট পাস ভিসা,আবেদন,খরচ সহ বিস্তারিত

দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক ভিসা আবেদন,যোগ্যতা ও খরচ

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *