ইউরোপের কোন দেশের টুরিস্ট ভিসা সহজে পাওয়া যায়? জানুন।

শেয়ার করুন

ইউরোপের কোন দেশের টুরিস্ট ভিসা সহজে পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকলে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। আজকের লেখায় আমরা ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর টুরিস্ট ভিসা তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য। সেই সাথে ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টিপস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও জানাব।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত এবং সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়। সেনজেন ভিসা দিয়ে আপনি ২৬টি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে, প্রতিটি দেশের ভিসার নিয়মকানুন ভিন্ন হতে পারে। কিছু দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন, আবার কিছু দেশের ভিসা তুলনামূলকভাবে সহজ।

সেনজেন ভিসা কি?

সেনজেন ভিসা হলো একটি বিশেষ ধরনের ভিসা, যা আপনাকে ইউরোপের ২৬টি দেশে অবাধে ভ্রমণের সুযোগ দেয়। এই দেশগুলো হলোঃ

  • অস্ট্রিয়া
  • বেলজিয়াম
  • চেক প্রজাতন্ত্র
  • ডেনমার্ক
  • এস্তোনিয়া
  • ফিনল্যান্ড
  • ফ্রান্স
  • জার্মানি
  • গ্রিস
  • হাঙ্গেরি
  • আইসল্যান্ড
  • ইতালি
  • লাটভিয়া
  • লিথুয়ানিয়া
  • লুক্সেমবার্গ
  • মাল্টা
  • নেদারল্যান্ডস
  • নরওয়ে
  • পোল্যান্ড
  • পর্তুগাল
  • স্লোভাকিয়া
  • স্লোভেনিয়া
  • স্পেন
  • সুইডেন
  • সুইজারল্যান্ড
  • লিচেনস্টেইন

এই ভিসা থাকলে আপনি এই দেশগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে প্রবেশ করে বাকিগুলোতেও ঘুরতে পারবেন, কোনো রকম বর্ডার কন্ট্রোল ছাড়াই।

ইউরোপের কোন দেশের টুরিস্ট ভিসা সহজে পাওয়া যায়?

যদিও কোনো দেশের ভিসাই একেবারে সহজ নয়, তবুও কিছু দেশ আছে যেখানে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। নিচে কয়েকটি দেশের কথা উল্লেখ করা হলোঃ

লিথুয়ানিয়া

লিথুয়ানিয়াতে টুরিস্ট ভিসা পাওয়া অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। এর কারণ হলো, লিথুয়ানিয়ার ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সাধারণত দ্রুত হয় এবং তাদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে যা আবেদনকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

লিথুয়ানিয়ার ভিসা পাওয়ার সুবিধা

  • লিথুয়ানিয়ার ভিসা সাধারণত কম সময়ে পাওয়া যায়।
  • অন্যান্য দেশের তুলনায় কম কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
  • লিথুয়ানিয়ার ভিসা কর্মকর্তারা সাধারণত আবেদনকারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন এবং সাহায্য করতে ইচ্ছুক থাকেন।

এস্তোনিয়া

এস্তোনিয়াও টুরিস্ট ভিসার জন্য বেশ জনপ্রিয়। অনলাইনে ভিসার আবেদন করার সুযোগ এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের জন্য এটি অনেকের কাছে পছন্দের।

এস্তোনিয়ার ভিসা পাওয়ার সুবিধা

  • অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা যায়, যা প্রক্রিয়াটিকে অনেক সহজ করে দেয়।
  • ভিসার প্রক্রিয়াকরণ সময় তুলনামূলকভাবে কম।
  • আধুনিক শহর এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মিশ্রণে দেশটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।

স্লোভাকিয়া

স্লোভাকিয়া মধ্য ইউরোপের একটি সুন্দর দেশ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক শহরের জন্য পরিচিত। এখানকার ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।

স্লোভাকিয়ার ভিসা পাওয়ার সুবিধা

  • ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ।
  • খুব বেশি কঠিন শর্ত নেই।
  • দেশটি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।

লাটভিয়া

লাটভিয়া বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত একটি সুন্দর দেশ। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক শহর এবং সংস্কৃতি অনেক পর্যটকের কাছে প্রিয় গন্তব্য।

লাটভিয়ার ভিসা পাওয়ার সুবিধা

  • লাটভিয়ার ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।
  • খুব বেশি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় না।
  • অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুত ভিসা পাওয়া যায়।

পোল্যান্ড

পোল্যান্ড মধ্য ইউরোপের একটি দেশ, যা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। পোল্যান্ডের ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং এটি অনেক পর্যটকদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য।

পোল্যান্ডের ভিসা পাওয়ার সুবিধা

  • পোল্যান্ডের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।
  • পোল্যান্ডে দেখার মত অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে।
  • অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় পোল্যান্ডে ভ্রমণ করা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।

ইউরোপের টুরিস্ট ভিসা পেতে কী কী লাগে?

ইউরোপের কোন দেশের টুরিস্ট ভিসা সহজে পাওয়া যায় সেটা জেনেছি।এবার কিকি কাগজ পত্র লাগে সেটা জনবো।ইউরোপের টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সাধারণত একই রকম থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। নিচে একটি সাধারণ তালিকা দেওয়া হলোঃ

  •  পাসপোর্টের কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য মেয়াদ থাকতে হবে।
  •  ভিসা ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
  •  পাসপোর্ট সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি প্রয়োজন হয়।
  • আপনার ভ্রমণের তারিখ, কোথায় থাকবেন, কী দেখবেন তার বিস্তারিত তথ্য।
  • হোটেল বুকিং অথবা অন্য কোনো থাকার ব্যবস্থা।
  • যাওয়া-আসার টিকেট।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, ইত্যাদি।
  • ইউরোপের জন্য প্রযোজ্য ভ্রমণ বীমা।
  • আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে একটি কভার লেটার।

দূতাবাস এবং কনস্যুলেট

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রতিটি দেশের নিজস্ব দূতাবাস এবং কনস্যুলেট রয়েছে। বাংলাদেশে ইউরোপের কিছু দেশের দূতাবাস রয়েছে, যেখানে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বাংলাদেশে ইউরোপের কোন কোন দেশের এম্বাসি আছে?

বাংলাদেশে নিম্নলিখিত ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস রয়েছেঃ

  • জার্মানি
  • ফ্রান্স
  • ইতালি
  • স্পেন
  • নেদারল্যান্ডস
  • ডেনমার্ক
  • নরওয়ে
  • সুইডেন
  • সুইজারল্যান্ড
  • তুরস্ক
  • গ্রিস

এই দূতাবাসগুলো ভিসা এবং অন্যান্য কনস্যুলার সেবা প্রদান করে থাকে।

ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ এবং প্রতিকার

অনেক সময় সঠিক কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও ভিসা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। এর কিছু সাধারণ কারণ হলোঃ

  • যদি আপনার আবেদনপত্রে কোনো তথ্য কম থাকে।
  • যদি আপনার জমা দেওয়া কাগজপত্রের ওপর ভিসা অফিসারের সন্দেহ হয়।
  • যদি আপনি প্রমাণ করতে না পারেন যে আপনার ভ্রমণের খরচ বহন করার সামর্থ্য আছে।
  • আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট না হলে।

যদি আপনার ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি আবার আবেদন করতে পারেন এবং এইবার উপরে দেওয়া টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

FAQ

১। সেনজেন ভিসা কত দিনের জন্য পাওয়া যায়?

সেনজেন ভিসা সাধারণত ৯০ দিনের জন্য পাওয়া যায়। এর মানে হলো, আপনি ১৮০ দিনের মধ্যে যেকোনো ৯০ দিন সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন।

২। ভিসার জন্য কতদিন আগে আবেদন করা উচিত?

ভিসার জন্য কমপক্ষে ১ মাস আগে আবেদন করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বা ছুটির মৌসুমে, আরও আগে আবেদন করা ভালো।

৩। টুরিস্ট ভিসার জন্য কি ইন্টারভিউ দিতে হয়?

কিছু ক্ষেত্রে ভিসা কর্তৃপক্ষ ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনার আবেদনপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্রের ওপর।

৪। ভিসার আবেদন ফি কত?

ভিসার আবেদন ফি দেশ ভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত, এটি ৬০ থেকে ৮০ ইউরোর মধ্যে হয়ে থাকে।

৫। একবার ভিসা রিজেক্ট হলে কি আর আবেদন করা যায়?

হ্যাঁ, ভিসা রিজেক্ট হলে আপনি আবার আবেদন করতে পারবেন। তবে, রিজেক্ট হওয়ার কারণগুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিক করে আবার আবেদন করা উচিত।

আরো জানুনঃ

নিউজিল্যান্ড ভিসা পাওয়ার উপায়

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *