ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা-আবেদন পদ্ধতি ও খরচ।

শেয়ার করুন

ইউরোপে কাজ করার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। উন্নত জীবনযাত্রা, উচ্চ বেতন এবং ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগের জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এর জন্য আবেদন করে। কিন্তু এই ভিসা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম,শর্ত ও প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়।নিয়ম ও শর্ত না মানলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানবো-

  • ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী?
  • কোন কোন দেশে এই ভিসা পাওয়া যায়?
  • আবেদন করার ধাপ সমুহ।
  • ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা, কাগজপত্র ও কত খরচ পড়বে। এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস।

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী?

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হলো একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট, যা বিদেশি নাগরিককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইউরোপের যে কোনো দেশে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই ভিসা সাধারণত নিয়োগকর্তার স্পন্সরশিপ বা সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

ইউরোপের যেসব দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায়

ইউরোপ মহাদেশে অনেক বেশি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিয়ে থাকে। যেসব দেশে সহজে ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায় সে দেশগুলো নিম্নরূপঃ

  • জার্মানি
  • ইতালি
  • ফ্রান্স
  • পোল্যান্ড
  • নেদারল্যান্ডস
  • পর্তুগাল
  • স্পেন
  • হাঙ্গেরি
  • চেক রিপাবলিক

ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ধরন

ইউরোপের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত সময়ের ওপার ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই ভিসা হয়ে থাকে। যেমন-

  • শর্ট টার্ম ওয়ার্ক ভিসা -এই ভিসাতে ইউরোপের কোন দেশে গেলে আপনি ৩ থেকে ৬ মাস সেখানে অবস্থান করতে পারেন।
  • লং টার্ম ওয়ার্ক ভিসা -অপার দিকে লং টার্ম ওয়ার্ক ভিসায় আপনি কোন দেশে গেলে সেখানে সর্বোচ্চ ১ বছর বা তার বেশি দিন থাকার সুযোগ পাবেন।
  • সিজনাল ওয়ার্ক ভিসা -এই ভিসা সাধারণত মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকে। মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন কাজের জন্য এই ভিসাতে লোক নিয়ে থাকে।
  • হাই স্কিলড ওয়ার্ক ভিসা -এই ভিসাতে নির্দিষ্ট কোনো দেশে চাহিদাসম্পন্ন, উচ্চ দক্ষতার পেশাগত যোগ্যতা সম্পন্ন লোক নিয়োগ করে থাকে। যেমন: ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক,আইটি স্পেশালিস্ট, ডাটা সায়েন্টিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট ইত্যাদি ।

ভিসার যোগ্যতা (Eligibility Criteria)

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন। সাধারণত যে যোগ্যতা গুলো লাগে সেগুলো হলোঃ

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট
  • নিয়োগকর্তার জব অফার লেটার
  • সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা
  • ভাষাগত দক্ষতা (ইংরেজি বা দেশভেদে স্থানীয় ভাষা)
  • কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকা
  • স্বাস্থ্য সনদ

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (Required Documents)

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে হলে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে হবে সাধারণত যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে সেগুলো হলঃ

  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
  • জব অফার লেটার বা চুক্তি পত্র।
  • ভিসা আবেদন ফর্ম।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সদ্য তোলা)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্র।

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া

প্রথমেই আপনাকে ইউরোপের যে দেশে কাজ করতে চান, সেখানকার কোনো অনুমোদিত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব অফার লেটার নিতে হবে। আপনি চাইলে  LinkedIn, EURES, Indeed, EuroJobs এর মতো ওয়েবসাইট ভিজিট করে বিভিন্ন তথ্য নিতে পারেন। অনেক দেশে কোম্পানিকে প্রথমে ওয়ার্ক পারমিট স্পন্সরশিপ বা লেবার পারমিট ইমিগ্রেশন দপ্তর থেকে নিতে হয়। এই অনুমতি পেলে এরপর আপনার ভিসা আবেদন শুরু করতে হবে।

এর পর আপনার নিজ দেশের ইউরোপীয় দূতাবাস/ভিসা সেন্টার (যেমন VFS Global) এ গিয়ে আপনাকে আবেদন জমা দিবেন। আবেদন ফর্ম পূরণ করবেন, ছবি তুলবেন,নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে, এবং বায়োমেট্রিক ডাটা (আঙুলের ছাপ, ছবি) দিয়ে দিবেন। এই আবেদন ফি দেশ ভেদে ভিন্ন হয় সেটা আমি পুর্বেই জানিয়েছি।কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট/ক্যাশে ফি দিতে হয়।বিস্তারিত সেটা ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিবেন।

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রোসেসিং এর সময় দেশ ও ভিসার ধরন অনুযায়ী প্রায় ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। ব্লু কার্ড বা হাই-স্কিলড ভিসার ক্ষেত্রে সময় তুলনামূলক অনেক কম লাগে।সর্বশেষ ভিসা অনুমোদন পেলে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই দেশে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন।পৌঁছানোর পর নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ কর রেসিডেন্স পারমিট বা ওয়ার্ক পারমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

ইউরোপ Work Permit ভিসার খরচ (Visa Fees)

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে খরচ দেশভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। নিচে আমি বিভিন্ন দেশের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আনুমানিক খরচ তুলে ধরলাম।

  • জার্মানি  (সাধারণ ওয়ার্ক ভিসা) ভিসা আবেদন ফি: ৭৫ ইউরো।
  • জার্মানি (ই ইউ ব্লু কার্ড) আবেদন ফ্রিঃ ১১০ ইউরো।
  • ফ্রান্স (লং-স্টে ওয়ার্ক ভিসা) আবেদন ফি -৯৯ ইউরো।
  • স্পেন ভিসা আবেদন ফি-১২৮ইউরো।
  • ইটালি ভিসা আবেদন ফি-১১৬ ইউরো।
  • পোল্যান্ড ভিসা আবেদন ফি-৮০ ইউরো।
  • হাঙ্গেরি ভিসা আবেদন ফি-১১০ ইউরো।
  • নেদারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন ফি-৩২০ ইউরো।
  • আয়ারল্যান্ড ভিসা আবেদন ফি-১০০০ থেকে ১৫০০ ইউরো।
  • এস্তোনিয়া ভিসা আবেদন ফি-৮০ থেকে ১০০ ইউরো।
  • পর্তুগাল ভিসা আবেদন ফি-৯০ ইউরো।
  • মাল্টা ভিসা আবেদন ফি-১৫০-২৫০ ইউরো।
  • বুলগেরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন ফি-২০০ থেকে ৫০০ ইউরো।

এছাড়াও হেলথ ইন্সুরেন্স, ডকুমেন্ট অনুবাদ, নোটারাইজেশন, এজেন্ট ফি, দূতাবাস ফি ইত্যাদি বাবদ দেশ ভেদে ২০ থেকে ৩০০ ইউরো বা তার বেশি হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা জানা জানা দরকার

  • ভুয়া জব অফার ও এজেন্ট থেকে সবসময় সতর্ক থাকুন।
  • অফিসিয়াল দূতাবাস ওয়েবসাইট থেকে তথ্য যাচাই করে নিন।
  • সব ডকুমেন্ট সত্য ও বৈধ থাকতে হবে।
  • সময়মতো আবেদন করুন,কারণ কোটার ভিত্তিতে অনেক দেশ ভিসা দিয়ে থাকে।

 প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট কি নবায়নযোগ্য?

উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত মেয়াদ শেষে নবায়ন করা যায় যদি আপনার চাকরি অব্যাহত থাকে।

প্রশ্ন ২: ব্লু কার্ড কী?

উত্তর: ব্লু কার্ড (EU ব্লু কার্ড) হলো হাই স্কিলড প্রফেশনালদের বা যারা কোন বিশেষ কাজে পারদর্শী তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ওয়ার্ক পারমিট ভিসা।

প্রশ্ন ৩: স্পন্সর ছাড়া কি ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়?

উত্তর: খুবই সীমিত ক্ষেত্রে সম্ভব, তবে বেসিরভাগ স্পন্সর লাগে।

শেষ কথাঃ

ইউরোপে কাজ করার জন্য ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা অধিক গুরুত্বপূর্ণ । সঠিক যোগ্যতা, কাগজপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। সুতরাং, আবেদন করার পূর্বে আপনি যে দেশে যেতে চান, তার ওয়েবসাইটে সকল তথ্য ভালোভাবে দেখে বুঝে তারপর আবেদন করুন।

আরো জানুনঃ

কাতার থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায়-সম্পূর্ণ গাইড

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *