গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা। সুবিধা ও সেরা পলিসি
গাড়ি একটা স্বপ্নের মতো, তাই না? কিন্তু স্বপ্নপূরণ হওয়ার পরেই আসে কিছু দায়িত্ব। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গাড়ির ইন্সুরেন্স। গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা এই প্রশ্নটা আপনার মনেও নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কেন জরুরি, কত প্রকার ইন্সুরেন্স হয়, খরচ কেমন, আর কীভাবে সেরা পলিসিটা বেছে নেবেন সব কিছুই থাকবে এই লেখায়।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কেন প্রয়োজন?
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা জানার আগে জেনে নেই ইন্সুরেন্স কেন দরকার। ইন্সুরেন্স শুধুমাত্র একটি নিয়ম নয়, এটি আপনার এবং আপনার গাড়ির সুরক্ষা। রাস্তায় কখন কী ঘটে, তা তো বলা যায় না।
- অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। ইন্সুরেন্স থাকলে বড় আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়।
- মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট অনুযায়ী, থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
- ইন্সুরেন্স থাকলে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় একটা নিশ্চিন্ত ভাব থাকে।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত প্রকার?
গাড়ির ইন্সুরেন্স মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স
এটি হল সবচেয়ে বেসিক ইন্সুরেন্স।
যদি আপনার গাড়ির দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়, তাহলে এই ইন্সুরেন্স সেই ক্ষতিপূরণ দেয়।
আইন অনুযায়ী, এই ইন্সুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
কম্প্রিহেন্সিভ ইন্সুরেন্স
এই ইন্সুরেন্স থার্ড পার্টি কভারেজের পাশাপাশি আপনার গাড়িরও ক্ষতিপূরণ দেয়।
যেমন, দুর্ঘটনা, চুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে আপনার গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে, এই ইন্সুরেন্স কভার করবে।
একটু বেশি খরচ হলেও, কম্প্রিহেন্সিভ ইন্সুরেন্স অনেক বেশি নিরাপদ।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা ?
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা সেটা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমনঃ
- গাড়ির মডেল ও বয়সঃ দামি গাড়ি বা পুরনো গাড়ির ইন্সুরেন্স খরচ সাধারণত বেশি হয়।
- ইন্সুরেন্সের প্রকারঃ থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্সের চেয়ে কম্প্রিহেন্সিভ ইন্সুরেন্সের খরচ বেশি।
- নো ক্লেইম বোনাসঃযদি আগের বছরগুলোতে কোনো ক্লেইম না থাকে, তাহলে ইন্সুরেন্সে ছাড় পাওয়া যায়।
- ভৌগোলিক অবস্থানঃ শহরের ওপর নির্ভর করে ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম কমবেশি হয়।
- ইন্সুরেন্স কোম্পানির ওপর নির্ভর করেঃ একেক কোম্পানি একেক রকম প্রিমিয়াম অফার করে।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা সেটা মূলত গাড়ির মডেল, বছর ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করলেও বাংলাদেশে সাধারণ ব্যক্তিগত গাড়ির ইন্সুরেন্স ৮,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গাড়ির ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম কীভাবে হিসাব করা হয়?
গাড়ির ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম হিসাব করার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে।
সাধারণত, আইডিভি (IDV) বা ইনস্যুরড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু-এর ওপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়। আইডিভি হল আপনার গাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য।
এছাড়াও, ইঞ্জিনের ক্ষমতা, গাড়ির বয়স এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরও প্রিমিয়ামের ওপর প্রভাব ফেলে।
গাড়ির ইন্সুরেন্স করার নিয়ম
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা জানার পর গাড়ির ইন্সুরেন্স করার নিয়ম জেনে নেব। গাড়ির ইন্সুরেন্স করার নিয়ম এখন অনেক সহজ। আপনি অনলাইনে অথবা সরাসরি ইন্সুরেন্স কোম্পানির অফিসে গিয়ে ইন্সুরেন্স করতে পারেন।
অনলাইনে ইন্সুরেন্স করার জন্য, প্রথমে বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করে প্রিমিয়াম তুলনা করুন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (RC)।
- আইডেন্টিটি প্রুফ (যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড)।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র।
- আগের পলিসির কাগজপত্র (যদি থাকে)।
- অনলাইনে ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করুন।
গাড়ির বীমা কোম্পানিগুলোর তালিকা
বাজারে অনেকগুলো ভালো বীমা কোম্পানি রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকটির নাম নিচে দেওয়া হল
বাজাজ অ্যালিয়ান্সঃ এই কোম্পানিটি দ্রুত ক্লেইম সেটেলমেন্টের জন্য পরিচিত।
আইসিআইসিআই লম্বার্ডঃ এদের ক্যাশলেস গ্যারাজ নেটওয়ার্ক অনেক বড়।
এসবিআই জেনারেল ইন্সুরেন্সঃ এই কোম্পানিটি ভরসাযোগ্য এবং তাদের পলিসিগুলো সহজবোধ্য।
গাড়ির ইন্সুরেন্স করার সুবিধা
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা জেনেছি। এবার জানবো এর সুবিধা। ইন্সুরেন্স করার অনেক সুবিধা আছে।
- দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি থেকে এটি আপনাকে রক্ষা করে।
- থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স থাকলে আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।
- কম্প্রিহেন্সিভ ইন্সুরেন্স আপনার গাড়ির মেরামত খরচ বহন করে।
- চুরি হয়ে গেলে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতি হলে ইন্সুরেন্স ক্ষতিপূরণ দেয়।
গাড়ির ইন্সুরেন্স এবং ট্যাক্স
গাড়ির ইন্সুরেন্স এবং ট্যাক্স দুটোই আলাদা বিষয়।
গাড়ির ট্যাক্স হল সরকারের ধার্য করা একটি কর, যা প্রতি বছর দিতে হয়।
অন্যদিকে, ইন্সুরেন্স হল আপনার গাড়ির সুরক্ষার জন্য। ইন্সুরেন্স না থাকলে, আপনি ট্যাক্স দিতে পারবেন না।
গাড়ির ইন্সুরেন্স করার সেরা উপায়
গাড়ির ইন্সুরেন্স করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার, যাতে আপনি সেরা পলিসিটি বেছে নিতে পারেন।
বিভিন্ন কোম্পানির পলিসিগুলো তুলনা করে দেখুন। প্রিমিয়াম, কভারেজ এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো ভালোভাবে যাচাই করুন।
আপনার কী ধরনের কভারেজ প্রয়োজন, তা আগে ঠিক করুন। শুধুমাত্র কম প্রিমিয়ামের দিকে না তাকিয়ে, আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পলিসি বাছুন।
যে কোম্পানির ক্লেম সেটেলমেন্টের রেকর্ড ভালো, সেই কোম্পানি থেকে ইন্সুরেন্স করানো ভালো।
প্রয়োজন অনুযায়ী, আপনি আপনার পলিসিতে কিছু অতিরিক্ত কভার যোগ করতে পারেন, যেমন রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স বা ইঞ্জিন প্রোটেকশন।
গাড়ির ইন্সুরেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা তা তো জানলাম। এবার গাড়ির ইন্সুরেন্স করার জন্য কিছু জরুরি কাগজপত্র লাগে তা জানবো।
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আরসি)।
- আধার কার্ড বা ভোটার আইডি-র মতো পরিচয়পত্র।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন, ইউটিলিটি বিল বা আধার কার্ড)।
- আগের ইন্সুরেন্স পলিসির কপি (যদি থাকে)।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
গাড়ির ইন্সুরেন্স কিভাবে করে
গাড়ির ইন্সুরেন্স করা এখন খুব সহজ। আপনি দুইভাবে ইন্সুরেন্স করতে পারেনঃ
অনলাইনেঃ বিভিন্ন ইন্সুরেন্স কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি পলিসি কিনতে পারেন।
অফলাইনেঃ কোনো ইন্সুরেন্স এজেন্টের মাধ্যমে অথবা কোম্পানির অফিসে গিয়ে ইন্সুরেন্স করতে পারেন।
অনলাইনে ইন্সুরেন্স করার সময়, প্রথমে বিভিন্ন পলিসি তুলনা করুন, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পলিসি বেছে নিন, এবং অনলাইনে পেমেন্ট করুন।
গাড়ির ইন্সুরেন্স মেয়াদ
গাড়ির ইন্সুরেন্স সাধারণত এক বছরের জন্য করা হয়।
তবে, কিছু কোম্পানি দুই বা তিন বছরের পলিসিও অফার করে।
পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সেটি রিনিউ করা জরুরি, না হলে আইনি ঝামেলা হতে পারে।
গাড়ির ইন্সুরেন্স খরচ কমানোর টিপস
গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা জানার পর কিভাবে এর খরচ কমানো যায় তার কিছু উপায় জানবো।
নো ক্লেইম বোনাস (NCB): প্রতি বছর ক্লেইম না করলে, NCB-এর সুবিধা পাওয়া যায়, যা প্রিমিয়াম কমাতে সাহায্য করে।
অনলাইনে তুলনা করুনঃ বিভিন্ন কোম্পানির পলিসি অনলাইনে তুলনা করলে সবচেয়ে কম দামের পলিসি খুঁজে পাওয়া যায়।
বেশি আইডিভি (IDV) নির্বাচনঃ আইডিভি বেশি রাখলে প্রিমিয়াম কিছুটা কমতে পারে, তবে এটি আপনার গাড়ির সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত কভার বাদ দিনঃ যদি আপনার কিছু অতিরিক্ত কভারের প্রয়োজন না হয়, তাহলে সেগুলো বাদ দিয়ে প্রিমিয়াম কমাতে পারেন।
গাড়ির ইন্সুরেন্স নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্স কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট অনুযায়ী, থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্স কত দিনের জন্য করা যায়?
উত্তর: সাধারণত এক বছরের জন্য করা যায়, তবে কিছু কোম্পানি দুই বা তিন বছরের পলিসিও অফার করে।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম কিভাবে পরিশোধ করা যায়?
উত্তর: আপনি ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিং বা ইউপিআই-এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারেন।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্স ট্রান্সফার করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি আপনার গাড়ির ইন্সুরেন্স অন্য নামে ট্রান্সফার করতে পারেন।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্স অনলাইনে কিভাবে করব?
উত্তর: প্রথমে বিভিন্ন ইন্সুরেন্স কোম্পানির ওয়েবসাইটে যান, পলিসি তুলনা করুন, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পলিসি নির্বাচন করুন এবং অনলাইনে পেমেন্ট করুন।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্সের আইডিভি (IDV) কি?
উত্তর: আইডিভি (IDV) হল ইনস্যুরড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু, যা আপনার গাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য।
প্রশ্ন: গাড়ির ইন্সুরেন্স রিনিউ করার শেষ তারিখ কবে?
উত্তর: পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আপনাকে ইন্সুরেন্স রিনিউ করতে হবে।
প্রশ্ন: পুরনো গাড়ির ইন্সুরেন্স কিভাবে করব?
উত্তর: পুরনো গাড়ির ইন্সুরেন্স করার নিয়ম নতুন গাড়ির মতোই। তবে, পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম একটু বেশি হতে পারে।
শেষ কথাঃ
গাড়ির ইন্সুরেন্স শুধু একটি খরচ নয়, এটি আপনার ভবিষ্যতের সুরক্ষা।গাড়ির ইন্সুরেন্স কত টাকা এই প্রশ্নের উত্তর এখন আপনার কাছে স্পষ্ট। তাই, দেরি না করে আজই আপনার গাড়ির জন্য সঠিক ইন্সুরেন্স পলিসিটি বেছে নিন।
আরো জানুনঃ
সুদমুক্ত লোন কিভাবে পাওয়া যায়-বাংলাদেশে সুদবিহীন লোন।





